চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বন্ধুহীন জীবন কেমন?

আপনি নিজের উপর ভরসা করতে শিখবেন, শুধুই নিজের উপর। এমনটাই বলছিলেন ২৬ বছর বয়সী হ্যাজেল নিওয়েল। যখন তিনি খুব একাকী, উদ্বিগ্ন এবং চারপাশে থাকা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন তখনকার সময়ের কথা বলতে গিয়ে একথা বলেন তিনি।

ব্রিটিশ রেড ক্রসের নতুন একটি গবেষণা বলছে, যুক্তরাজ্যের লাখ লাখ মানুষ একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভোগে।

অন্তত ৪ হাজার মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে জানা যায়, তাদের বেশির ভাগেরই কোনো প্রিয় বন্ধু নেই। তিনভাগের একভাগ বলেছেন, তারা মাঝে মাঝে এতটাই একাকী বোধ করেন যে, তাদের মনে হয় তাদের কথা বলার মতো কেউ নেই।

যেখানে অনেকেরই ধারণা একাকীত্ব শুধু বয়স্ক লোকদেরই আক্রান্ত করে। তখন গবেষণা বলছে একটু বয়সী শিশুরাও এই সমস্যায় ভুগতে পারে।

হ্যাজেল জানান বিয়ের পর নতুন একটি জায়গায় বসবাস শুরু করার সময়ে প্রথম তিন বছরে কোনো বন্ধুই তৈরি করতে পারেননি তিনি । হ্যাজেল বিবিসিকে বলেন, সবাই আমাকে বলছিলো সবকিছুই বন্ধুভাবাপন্ন এবং বন্ধু তৈরি করা খুবই সহজ। কিন্তু আমি সামাজিকভাবে খুবই সংগ্রাম করছিলাম।

তিনি যোগ করেন, আমার সবসময় বিষয়টা কঠিন লাগতো। ছোটবেলায় অনেক শাসনের মধ্যেই ছিলাম, কিন্তু তারপরও আমি আমার অন্য ভাইবোনদের থেকে আলাদা। তাই সামাজিক যোগাযোগকে কখনোই দক্ষতা হিসেবে শেখা হয়নি। আমার মনে হয় কিছু মানুষ স্বাভাবিভাবেই এটি পায় আর কিছু মানুষকে অনেক কষ্ট করতে হয় এই জায়গায় পৌঁছাতে। আমি দ্বিতীয় ধরণের মানুষ।

বিয়ের পর স্বামীকেও সবটা খুলে বলেছেন হ্যাজেল। কিন্তু কোনো সমাধান আসেনি।  বলেন, মানুষকে বিশ্বাস করতে পারতাম না। মুখ দেখে মানুষকে গ্রহণ করতেও পারতাম না। এই রকম পরিস্থিতিতে মানুষ নিজের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে আর হারিয়ে ফেলে নিজেকেও।

হ্যাজেল যোগ করেন, সেদিনগুলোতে বেশিরভাগ সময়ই উদ্বিগ্নতায় কাটতো। কিন্তু কখনো ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয়নি। ফলে কিছুই পরিষ্কার হতেও পারিনি। খুবই হতাশাজনক ছিলো বিষয়টা, খুবই একাকী। এই রকম পরিস্থিতিতে আপনি নিজেকে আরো বেশি গুটিয়ে নিতে শুরু করবেন কারণ আপনি জানেন না বিষযটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন।

পরিবর্তনটা আসলো যখন তিনি গর্ভবতী হলেন। হ্যাজেল চাইছিলেন না তার মেয়েও একই সমস্যায় পড়ুক। এই কারণে তিনি বেশ কিছু মা ও ছেলেদের গ্রুপ খুঁজে বের করেন।  একই ধরনের কর্মকাণ্ডে থাকা গ্রুপ খুঁজে পেয়ে হ্যাজেল বলেন, এখন বেশ কিছু ভালো বন্ধু আছে তার। তবে স্বীকার করেন, এটা তখনই ঘটেছে যখন তিনি সামাজিক হওয়া শিখেছেন।

এখন অন্য যারা একাকী এবং বিচ্ছিন্ন জীবন কাটায় তাদের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন হ্যাজেল। হ্যাজেলের জন্য মাতৃত্ব ছিলো একাকীত্ব কাটানোর কারণ, কিন্তু অনেকের জন্য সেটাই একাকীত্বের কারণ হিসেবে দেখা দেয়।

২৭ বছর বয়সী সিমোনা ভারারনিউট ২০ বছর বয়সে লিথুয়ানিয়া থেকে বেলফাস্টে যান। প্রথম ছয়মাস তিনি খুশিই ছিলেন। তিনি বলেন, সেটাই প্রথম কোনো দেশ ছিলো যেখানে আমি ছুটিতে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম আসবো, কয়েক সপ্তাহ থাকবো, তারপর বাড়ি চলে যাবো। কিন্তু জায়গাটা আমি পছন্দ করে ফেললাম। মানুষগুলোকেও পছন্দ হলো। তারা সবসময় হাসিখুশি থাকতো। এমনকি অজানা মানুষকে শহরে দেখলেও তারা থামবে এবং হ্যালো বলবে। এমনটা কখনোই আমার শহরে দেখিনি।

একাকীত্বটা আসলো আরো পরে। ছয়মাস পরে মনে হতে থাকলো, বাড়িতে সবাই ফিরেছে, শুধু আমিই এখানে পড়ে আছি। আমি যাদের সঙ্গে বাস করছিলাম তারা বন্ধুত্বপূর্ণ, কিন্তু ঠিক সেই বন্ধু না যাদের বিশ্বাস করা যায় বা মনে যা আছে তাই বলে দেওয়া যায়। এটা খুবই কঠিন। আর ছেলে সেবাস্টিয়ানের জন্মের পর তো পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে গেলো।

তিনি যোগ করেন, সারাদিন তাকে নিয়ে ঘরে কাটানো। কোনো বন্ধু বান্ধব ছাড়া সত্যিই মানসিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলো। মনে হতো চার দেয়ালে বন্দী হয়ে গেছি। আমি শুধু বাইরে যেতে চাইতাম। ঘরে থাকতেই চাইতাম না।

এরপরই চ্যারিটির সহায়তায় নতুন কমিউনিটিতে যুক্ত হন তিনি। যেটা আবার বের করে আনেন তাকে।

সিমোনা বলেন, সাহায্য চাইতে কখনো ভয় বা লজ্জা পাবেন না। আমরা প্রতিদিনই নতুন কিছু না কিছু শিখি।