চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘বন্ধন’ পিএসজির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খরা কাটানোর বড় শক্তি

লিসবনের মাইরিয়াড হোটেলটা দুই সপ্তাহ ধরে পিএসজির আখড়া। করিডোর দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই খেলোয়াড়দের প্রাণচাঞ্চল্য নজর কাড়ে। বাইরে যে করোনা নামের এক মহামারীর থাবা, সেটা পিএসজির খেলোয়াড়দের দেখে বোঝাও মুশকিল। অবশ্য করোনাকে ধন্যবাদই দিতে পারে প্যারিসের ক্লাবটি, মহামারীর জন্য এক লেগের মিনি টুর্নামেন্ট হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর তার সঠিক ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো ফাইনালের স্বাদ পেয়েছে ফরাসিরা।

হোটেলে অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার পাশের কক্ষটা নেইমারের। কোনো এক কারণে দুজনকে খুনসুটি করতে দেখা গেছে ম্যাচের আগেরদিন। প্রেসনেল কিমপেম্বে আর এরিক ম্যাক্সিম চাপো-মোটিংদের মাঝেও দেখা মিলেছে ইতিবাচক মানসিকতা। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ফুটবলার কেইলর নাভাস ও আন্দ্রে হেরেরা চেষ্টা করছেন দলটাকে এক সুতোয় বেঁধে রাখার।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

অথচ গত মৌসুমে এই দলটাই যেন মনে হয়েছিল ছিন্নভিন্ন এক স্কোয়াড। এবার সেটা মনে হচ্ছে না। প্রতিবার ম্যাচ শুরুর আগে হেরেরার দায়িত্ব দলকে উজ্জীবিত করা। দলটা এখন এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়েছে, যা ছিঁড়ে ফেলা বেশ কঠিন, বিশেষ করে নেইমার আর কাইলিয়ান এমবাপের বন্ধন যেন সব থেকে মজবুত।

রোববার রাতে লিসবনের ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে পিএসজির আক্রমণভাগের এই ফরোয়ার্ডদ্বয়। ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়।

সেমিফাইনালে আরবি লেইপজিগের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়ের পর প্যারিস এখন উৎসবের নগরী। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার পর উৎসব করতে তাদের কোনো রাখঢাক নেই। ফাইনালে তো উঠেছে বায়ার্নও। কিন্তু তারা নাকি উৎসব জমিয়ে রেখেছে শিরোপার মঞ্চে শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত। তাতে পিএসজি কোচ টমাস টুখেল আর তার শিষ্যদের কোনো মাথাব্যথা নেই। যেভাবে মন চাইছে তারা সেভাবেই হৈ-হুল্লোড় করে চলেছেন।

গত বছর প্রায় এই সময়টাই ছিল পিএসজির জন্য ঝড়ে মৌসুম। খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল, খেলোয়াড়দের সঙ্গে স্পোর্টস ডিরেক্টর লিওনার্দোর বনিবনা ছিল না, কোচ টুখেলের সঙ্গে এমবাপে ঠিকমতো কথা বলতেন না। সেসবের কোনকিছুই স্থায়ী হয় নাই, লেইপজিগের বিপক্ষে জয়ের পর পুরো দল যে কথাটা বলেছে তা হল ‘রিকভারি’।

রোববার রাতের ফাইনালের আগে বায়ার্নের চেয়ে একদিন বেশি বিশ্রাম পেয়েছে পিএসজি। দলটাকে এখন বেশ ঝরঝরে মনে হচ্ছে। শরীরের ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে খেলোয়াড়রা বাড়তি অক্সিজেন নিচ্ছেন, ক্লাবের ফিজিও খেলোয়াড়দের মাংসপেশির বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন। নিজস্ব রাঁধুনিরা পছন্দের রান্না করছেন, খাবারের তালিকায় লাজানিয়া আর মাছের তরকারিই বেশি চলছে।

পিএসজির হেড অব পারফরম্যান্স দল নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালে নেইমার ছিলেন দুর্দান্ত। ফাইনালেও যেন ব্রাজিলিয়ান তারকা সেরাটা দিতে পারেন, সেটির বন্দোবস্ত চলছে। দলে কোনো ইনজুরি সমস্যা নেই। খেলোয়াড়দের ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে না। পূর্ণশক্তির এক পিএসজিই উপস্থিত হবে বায়ার্নের বিপক্ষে।

গত শুক্রবার অনুশীলনে পিএসজির পুরো দল উপস্থিত ছিল। চোট কাটিয়ে ফিরেছেন গোলরক্ষক নাভাস, মিডফিল্ডার মার্কো ভেরাত্তিও সুস্থ। অনুশীলনে দারুণ ছিলেন সেমির নায়ক ডি মারিয়া। ক্লাবের মাত্র যে কয়জন ফুটবলার অন্য ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন ডি মারিয়া তাদের একজন। পিএসজির হয়ে নিজে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরা হতে মরিয়া এ উইঙ্গার।

ক্লাবের পক্ষ থেকে খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে সতেজ রাখার চেষ্টা হচ্ছে। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে সমর্থকদের উপহার দিতে চায় পিএসজি। আবার সেই উপহার যেন খেলোয়াড়দের জন্য বাড়তি চাপ না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। নেইমাররা নাকি এবার বদ্ধ পরিকর, যেভাবেই হোক সমর্থকদের আনন্দে ভাসানোর সেরা সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে চাইছেন না।