রাজধানীর বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে দুই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় বনানী থানার ওসি ফরমান আলীর কর্তব্যকাজে গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ওই দুই অভিযোগকারীকে থানায় বসিয়ে রেখে হয়রানিও করা হয়েছে। মামলা গ্রহণে গড়িমসি করে আসামিদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন ফরমান আলী।
ওসি ফরমান আলীর বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট রোববার দেওয়ার কথা থাকলেও তা বর্ধিত করে বুধবার ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন: ইতোমধ্যে কমিটি বনানী থানার ওসি ফরমান আলীকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই কমিটিও ইতোমধ্যে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। এর মধ্যে একটি কমিটি মামলা নিতে গড়িমশি, প্রাথমিক তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে বনানী থানার ওসিকে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বনানী থানার ওসি অভিযোগের মৌখিক ও লিখিত জবাব দিয়েছে তদন্ত কমিটিকে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে অনেকের বক্তব্য নিয়েছি। বিষয়টির বিভিন্ন দিক আমরা খতিয়ে দেখছি। তদন্তে এ ঘটনায় কারো গাফিলতির প্রমাণ মিললে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
এই কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন।
তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানায়, ওসি ৪ মে ও ৫ মে অভিযোগকারীদের মামলা গ্রহণ করেননি। ৬ মে বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অভিযোগকারী দুই ছাত্রীকে থানায় বসিয়ে রাখেন। রাত ৯টার পর গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ থানায় যান। কেন একজন অভিযোগকারীকে দুই দিন ধরে থানায় হয়রানি করা হচ্ছে- অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের এমন প্রশ্নের মুখে ওসি মামলা গ্রহণ করতে বাধ্য হন। ওই দিন রাত ১০টায় ওসি থানায় মামলা গ্রহণ করেন বলে তদন্ত কমিটি তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে।
গত ১১ মে সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দিন আদালতে তোলা হলে আদালত সাফাতকে ৬ দিন এবং সাদমান সাকিফকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া গত ১৫ মে সাফাতের দেহরক্ষী রহমতকে গুলশান থেকে এবং ড্রাইভার বিল্লালকে নবাবপুর থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে রহমতকে ৩ দিন এবং বিল্লালকে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
গত ২৮ মার্চ বনানীতে দ্য রেইনট্রি হোটেলে বন্ধুর মাধ্যমে এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। এরপর অভিযুক্তরা ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে রাখে।
যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তাদের একজন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদ।
প্রাণনাশসহ বিভিন্ন হুমকি উপেক্ষা করে ঘটনার একমাসের বেশি দিন পর ওই দুই তরুণী ৪ মে বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করতে যান। তবে থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে তাদেরকে হয়রানী করে বলে অভিযোগ ওঠার ৪৮ ঘণ্টা পর ৬ মে ওই অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে।