প্রায় অর্ধলাখ মানুষের দীর্ঘ ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবনের অবসানের মধ্য দিয়ে বদলে গেলো বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্র। দু’দেশের ১৬২ ছিটমহল আর ছিটমহল নামে পরিচিত হবে না, স্ব স্ব দেশের পতাকা হাতে উৎসবে মেতেছে ওই জনপদের মানুষেরা। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয় ঐতিহাসিক ছিটমহল বিনিময়।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতের ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি, কুড়িগ্রামে ১২টি ও নীলফামারীর চারটি ছিটমহল (১৭১৬০ একর জমি) এখন থেকে বাংলাদেশের ভূখন্ড। আর ভারতের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (৭১১০ একর জমি) এখন ভারতের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। এই ছিটমহলগুলোর মধ্যে ১৮টি কুড়িগ্রাম ও ৩৩টি লালমনিরহাট জেলার অধীনে ছিলো।
নিজ নিজ দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ না থাকায় সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো ওই জনপদের অধিবাসীরা।
বাংলাদেশ অংশে উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা এবং ভারতের ভূখন্ডে উড়ছে ভারতের পতাকা। ছিটমহলবাসী পেয়েছে নিজ নিজ দেশের পরিচয়। বাংলাদেশের মুল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত হওয়ায় ওই জনপদের ৪১ হাজার ৪শ ৪৯ জন মানুষ এখন বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে গণ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতের ১১১টি ছিটমহলের ৯৭৯ জন ছাড়া অধিকাংশ অধিবাসী নাগরিকত্ব নির্ধারণের সময় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন। অন্যদিকে, ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের অধিবাসীর সবাই ভারতের নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন।
অমিমাংসিত সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ১৯৭৪’এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে হয় ঐতিহাসিক মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও সংসদের সমর্থনের অভাবে তা কার্যকর হয়নি এতো বছর। এ বছর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সকল আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে হয় পূর্ণাঙ্গ সমাধান। চুক্তির দলিল বিনিময় থেকে শুরু করে চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যন্ত সকল ধাপ পার করে বাংলাদেশ এখন ‘সীমান্ত বিরোধমুক্ত’ এশিয়ার একমাত্র দেশ।