দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। রোববার সিরাজগঞ্জেই বাবা-ছেলেসহ নিহত হয়েছে পাঁচজন। এছাড়া মাগুরা, নওগাঁ, রাঙামাটি, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাজীপুরে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, কামারখন্দ ও শাহজাদপুর উপজেলায় বজ্রপাতে বাবা-ছেলেসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও চারজন।
নিহতরা হলেন, কাজিপুরের ডিগ্রি তেকানী গ্রামের শামছুল মণ্ডল (৫৫), তার ছেলে আরমান (১৪), কামারখন্দের পেস্তক কুড়া গ্রামের কাদের হোসেন (৩৭), শাহজাদপুর উপজেলা ছয়আনি গ্রামের ফারুক খানের ছেলে নাবিল (১৭) ও রাশেদুল ইসলামের ছেলে পলিন (১৫)।
কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ জানান, রোববার সকালে ডিগ্রি তেকানী চরে ছেলেকে নিয়ে বাদাম তুলছিলেন শামছুল। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলেই দুজনেই ঝলসে যায়। তাদের উদ্ধার করে কাজিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।
আর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কামারখন্দ উপজেলার পেস্তক কুড়া গ্রামের একটি ধান ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে আহত কাদের হোসেনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পথে মারা যান। কামারখন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার তানজিলা বেগম এ কথা জানান।
আর ঝড়ের সময় আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয় নাবিল ও পলিন। এসময় আহত হয় আরও চারজন। আহতদের শাহজাদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার রাজিবুল ইসলাম সিদ্দিকি জানিয়েছেন।
মাগুরা:
মাগুরা সদরের অক্কুর পাড়া, রায় গ্রাম এবং শালিখা উপজেলার বুনাগাতী ও বাকলবাড়িয়া গ্রামে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন অক্কুর পাড়ার ভ্যানচালক শামীম, রায় গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে আলম, জয়পুরহাটের মনপুরা এলাকার আলম মিয়ার ছেলে মেহেদী এবং বাকলবাড়িয়া গ্রামের শক্তিপদ বিশ্বাসের ছেলে প্রল্লাদ বিশ্বাস।
মাগুরা সদর থানার এসআই আশ্রাফ হোসেন জানান, ঝড়-বৃষ্টির সময় ভ্যানচালক শামীম মাগুরা থেকে শ্রীপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। আর মাগুরা থেকে বাড়ি ফেরার পথে রায়গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হন আলম। শালিখার বুনাগাতী এলাকায় মোবাইল ফোন টাওয়ারে কাজ করার সময় বজ্রপাতের শিকার হন মেহেদী। মাগুরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষিত পাল জানান, হাসপাতালে আনার আগে তার মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বুনাগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বখতিয়ার হোসেন জানান, প্রল্লাদ বিশ্বাস মাঠে ধান ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতের শিকার হন।
নওগাঁ:
নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় এক গৃহবধূ ও এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সাপাহারে সোনাভানের স্বামীসহ আরও তিনজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন সাপাহারের শিমুলডাঙ্গা রামাশ্রম গ্রামের সোনাভান (২২) এবং পোরশার বালিয়াচান্দা গ্রামের মুক্তার হোসেন (১৪)।
সাপাহার থানার ওসি শামসুল আলম শাহ্ জানান, সকাল ৮টার সময় শিমুলডাঙ্গা রামাশ্রম গ্রামের বাড়িতে রান্নাঘরে কাজ করার সময় ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাতে সোনাভানের মৃত্যু হয়। আহতরা হলেন নিহতের স্বামী রুবেল হোসেন (২৮), ঝড়-বৃষ্টিতে তাদের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া কল্যাণপুর গ্রামের সালেহা বিবি (৪২) ও রাজ আহমেদুর (১২)। পোরশা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুর ২টার দিকে মাঠ থেকে ছাগল নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বজ্রপাতে মুক্তার হোসেনের মৃত্যু হয়। মুক্তার বালিয়াচান্দা গ্রামের বদরুজ্জামানের ছেলে। সে বালিয়াচান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র বলে ওসি জানান।
নোয়াখালী:
নোয়াখালী সদর ও সেনবাগ উপজেলায় বজ্রপাতে এক স্কুল ছাত্র ও এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও দুইজন। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের সোহেল রানা জগলুর ছেলে ও নোয়াখালী জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির দিবা ক-শাখার ছাত্র ইকবাল হাসনাত পিয়াল (১৩) এবং ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মো. রজন মিয়ার ছেলে মো. শাহিন (২৬)।
সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সকালে পিয়াল বন্ধুদের সাথে বাড়ির পাশের মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। এ সময় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে তারা দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। এক পর্যায়ে পিয়াল মাঠে ফেলে আসা জুতা আনতে গেলে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
সেনবাগ থানার ওসি হারুন অর রশিদ চৌধুরী জানান, দুপুরে নবীপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে ক্ষেতে ধান কাটার সময় কৃষক মো. শাহিনের মৃত্যু হয়।
এ সময় আব্বাস উদ্দিন ও মনির হোসেন নামের দুই শ্রমিক আহত হন বলে ওসি জানান। আহত দুই শ্রমিক ও একই এলাকার বাসিন্দা। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জ সদরের সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে নিহত হয়েছেন ললিত মিয়া (৩০) নামের এক কৃষক। রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় বাড়ির পাশে বোরো ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। সদর থানার ওসি মো. শহিদুল্লাহ জানান, বজ্রপাতের পর স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই।
রাঙামাটি:
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে নিহত হন গৃহবধূ মানছুরা বেগম (৩৫)। তিনি উপজেলার মুসলিম ব্লক এলাকার বাসিন্দা বলে বাঘাইছড়ি থানার ওসি আমির হোসেন জানান। তিনি বলেন, ঘরের বাইরে কাজ করার সময় দুপুর ১টার দিকে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
গাজীপুর:
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মাটিকাটায় বজ্রপাতে এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত চারজন।
নিহত জাফিরুল ইসলাম গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জ উপজেলার হরিনাথপুর এলাকার আব্বাস আলীর ছেলে।
কালিয়াকের থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমিকরা মাটিকাটা এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় প্রবেশের সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই কারখানার পাঁচজন শ্রমিক আহত হন। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। শেখ ফজিলাতুন নেছা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাপিরুলের মৃত্যু হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় বজ্রপাতে আব্দুর রহিম (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুইজন।
রোববার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত রহিমের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়। আহতদের নাম জানা যায়নি।
আখাউড়া থানার ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদার জানান, দরুইন গ্রামে রহিমসহ কয়েকজন কৃষক ধান কাটছিলেন। এ সময় প্রচণ্ড ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত হলে রহিমসহ তিন কৃষক গুরুতর আহত হন।
তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রহিমকে মৃত ঘোষণা করে।