প্রাণহানির দিক থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাত ভয়াবহ দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সর্বশেষ রোববার কুষ্টিয়ার মীরপুর উপজেলার একটি গ্রামে একই জায়গায় পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। গতবছর বজ্রপাতে দুই শ’র বেশি মানুষের প্রাণহানির পর এটিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের মে মাসে একদিনেই বজ্রপাতে প্রাণ হারান ৮২ ব্যক্তি৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈচিত্র্যের কারণেই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া বড় এবং উঁচু গাছপালা কেটে ফেলায় বজ্রপাত ভূপৃষ্ঠে সরাসরি আঘাত হানে। ফলে হতাহতের ঘটনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ছাড়া জনসংখ্যার অধিক্যও বজ্রপাতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম আজাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সাম্প্রতিক সময়ে যে বজ্রপাত বেড়ে গেছে তার মূল কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিববর্তন এবং বৈচিত্র্য। এছাড়া মানবসৃষ্ট কারণও রয়েছে। বড় এবং লম্বা গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে বজ্রপাত কোন ধরনের বাধা না পেয়ে সরাসরি ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানছে। এতে হতাহতের ঘটনা বাড়ছে।
তবে আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান অবশ্য মনে করেন, বজ্রপাত আগে যেমন হত এখনও তেমনই হচ্ছে, বাড়েনি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: বজ্রপাতের ঘটনা আগের চেয়ে এখন বেশি প্রচার পাচ্ছে। মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে। সংবাদমাধ্যমেও বেশি প্রচার হচ্ছে। তাই আপাতভাবে মনে হতে পারে যে এখন বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটছে। কিন্তু আসলে তা নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে তিনি জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধিকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন: আগে যেখানে এক বর্গকিলোমিটারে ২শ লোক বাস করতো এখন সেখানে ২ হাজার লোকের বাস। ফলে বজ্রপাতে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার পরিমান বেড়েছে।
বজ্রপাত যেহেতু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যাপার তাই এটি প্রতিরোধ করা না গেলেও, হতাহতের ঘটনা কমানো সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য প্রয়োজন অধিকতর সচেতনতা সৃষ্টি।
এ প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ বলেন: প্রকৃতির ওপর যেহেতু মানুষের হাত নেই। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে মানুষ সচেতন হলে হতাহতের পরিমাণ কমতে পারে।
কীভাবে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে তার কয়েকটি উপায় তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক বলেন: খোলা জায়গা বা গাছের নিচে থাকা যাবে না। বজ্রপাতের সময় খোলার জায়গা থেকে গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। খোলা জায়গায় থাকলে মাথা নীচু করে যথাসম্ভব মাটির সঙ্গে মিশে থাকতে হবে। টিনের তৈরি ঘরে ঝুঁকি থাকলেও কংক্রিটের বিল্ডিং তুলনামূলক নিরাপদ। তবে বিল্ডিং এ অবস্থান করলেও সবার একরুমে থাকা উচিৎ নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বজ্রপাতে হতাহতের পরিমাণ কমাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। এ জন্য সরকার কিছু উদ্যোগ নিলেও আরও বেশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরাও বজ্রপাতের সময় করনীয় সম্পর্কে জানতে পারে।