নির্মাণের পর বছর পার হওয়ার আগেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে ফাটল ধরেছে। সরেজমিনে ভাস্কর্যের বিভিন্ন অংশে বেশ কয়েকটি ফাটল দেখা যায়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও ভাস্কর মৃণাল হক বলেছেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি ভাস্কর্যটি মেরামত করে দেবেন।
ভাস্কর্যটি নির্মাণের সময়ও দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। তবে শিক্ষকদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আশরাফ ভাস্কর্যটি তড়িঘড়ি করে স্থাপন করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভাস্কর্যটি নির্মাণের সময় দুর্নীতির অভিযোগে প্রত্যক্ষ আন্দোলন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান। টানা ১৫ দিন ভাস্কর্যের সামনে বসে তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ফাটলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন: এ ভাস্কর্য নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে যা স্পষ্ট। এটা দুঃখজনক যে প্রশাসন তখন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এখন তদন্ত সাপেক্ষ দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।
ফাটলের বিষয়ে কোন তথ্য জানেন না উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহিদুল হাসান বলেন: ভাস্কর্যে ফাটল আছে কি না, তা আমি অবগত নই। তবে কোন ত্রুটি দেখা দিলে ভাস্কর মৃণাল হক তা নিজ খরচে মেরামত করে দেবেন মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মো: আইনুল হক বলেন: তৎকালীন উপাচার্য ভাস্কর্য নির্মাণে দুর্নীতি করেছেন যা আজ প্রমানিত। ভাস্কর্যে যে দুর্নীতি হয়েছে সে বিষয়ে প্রশাসনকে লিখিতভাবেও বলেছি।
ভাস্কর্যে ফাটলের বিষয়ে ভাস্কর মৃণাল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ফাটলের খবর শুনেই আমি লোক পাঠিয়েছি। কোন ত্রুটি দেখা দিলে আমরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তা মেরামত করে দেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের বরাত থেকে জানা যায়, ভাস্কর্যের জন্য ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে দুই দফায় ১০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের দাবি, টেন্ডার প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে অবৈধভাবে ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত নির্ধারিত মাপ ও নকশায় ভাস্কর্যটি হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তখন সমালোচনার ঝড় তোলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নতুন ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।
গত বছরের ২৫ মে ভাস্কর্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংকুচিত স্থানে স্থাপন করা হয়।