বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্পগুলো সবসময়ই মন ছুঁয়ে যায় সবার। পর্দায় দেখা গল্পগুলোর সাথে নিজ জীবনের মিল মানুষকে সেই নাটক দেখতে আরও আগ্রহী করে। গল্পের নায়ক বা নায়িকার সাথে একাত্ম হয়ে সেই নাটক উপভোগের মাত্রা বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। টেলিভিশন নাটক নিয়ে আক্ষেপের এই সময়ে এ বছর বেশ কয়েকটি নাটক আলোচিত হয়েছে। আর তার প্রায় সবগুলোই ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবার ও জীবনের গল্প নিয়ে।
বড় ছেলে
এই বছরের সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাটকের নাম বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসবে ‘বড় ছেলে’র নাম। মিজানুর রহমান আরিয়ানের রচনা ও পরিচালনায় এই নাটক প্রচারিত হয় গত কুরবানি ঈদের চারদিন পর। এখন পর্যন্ত ইউটিউবে ‘বড় ছেলে’ দেখা হয়েছে ১ কোটি সাড়ে আটাশ লাখেরও বেশিবার।
সদ্য অবসরে যাওয়া স্কুল শিক্ষক বাবার পর সংসারের হাল ধরে পরিবারের বড় ছেলে রাশেদ (অপূর্ব), টিউশনের মাধ্যমে। বড় বোনও তাঁর সন্তানসহ থাকেন এই পরিবারেই। হাজার ইন্টারভিউ, চেষ্টার পরও ভালো চাকরি হয় না রাশেদের। রাশেদের প্রেমিকা রিয়া (মেহজাবিন) রাশেদকে প্রচণ্ড ভালোবাসলেও শেষ পর্যন্ত বাবার সিদ্ধান্তে অন্যত্র বিয়ে করতে রাজি হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলেদের দায়িত্ব, প্রেমিকা হারানো, হতাশা ঘেরা জীবনের কাহিনী নিয়েই আবর্তিত বড় ছেলের কাহিনী।
এ নাটকে অপূর্ব ও মেহজাবিন ছাড়াও অভিনয় করেছেন খালেকুজ্জামান, শেলী আহসান, শান্তা রহমান প্রমুখ।
বিকেল বেলার পাখি
ঈদের নাটক মানেই ভাঁড়ামো, কৌতুক বা সুরসুরি দিয়ে লোক হাসানো নাটক- এই চিন্তাধারা থেকে এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছেন এদেশের নির্মাতা ও দর্শকেরা। এ বছর রোজার ঈদে আদনান আল রাজীব প্রমাণ করলেন, সাধারণ পরিবারের সাধারণ গল্পের অসাধারণ নির্মান দিয়ে দেশীয় নাটকে ফেরানো যায় বাঙালি দর্শককে।
‘বিকেল বেলার পাখি’ ঢাকা শহরে বাস করা এক মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। বাবার সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনি সন্তানেরা তেমনভাবে উপলব্ধি করে না। নানা টানাপোড়েনের মধ্যে মেয়ের বিয়ের টাকাও হারিয়ে ফেলবার পর অসুস্থ বাবার জন্য বদলে যায় ছেলের জীবন। হঠাৎ করেই যেন বড় হয়ে যায় কয়েকদিন আগের জেদি, অবুঝ ছেলেটি। নাটকের শেষভাগে এসে বাবা-ছেলের মাঝের অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে বাঁধভাঙা কান্না কাঁদিয়েছে সব বয়সী দর্শককে।
‘বিকেল বেলার পাখি’ নাটকে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, অ্যালেন শুভ্র, ইরোরা গহর, ইফাত তৃষা ও সাফা নমনি।
চিত্রনাট্য করেছেন চারজন মিলে— আদনান আল রাজীব, মনিরুজ্জামান মনির, অন্বয় পাটওয়ারি, সাইদ আল নোমান সিয়াম। চিত্রগ্রহণে ছিলেন কামরুল হাসান খসরু।
আমাদের গল্পটা এমনও হতে পারত
জনপ্রিয় তরুণ নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ’র নাটক “আমাদের গল্পটা এমনও হতে পারতো” প্রচারিত হয়েছিল ১৭ নভেম্বর চ্যানেল আই এর পর্দায়। মা-বাবাকে নিয়ে সাধারণ একটি পরিবারে বেড়ে ওঠা মফস্বল শহরের এক শিক্ষিত ছেলে জাহিদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয় এই নাটক।
অক্ষম বৃদ্ধ বাবা, অসুস্থ মা, আনকোরা প্রেমের আবেগ সবার পিছুটানকে বুক পকেটে নিয়ে গ্রামের সহজ-সরল ছেলেটি পাড়ি জমায় শহরে। এক মুঠো স্বপ্ন পুঁজি করে দিন গুণতে থাকে ছেলেটি। আজ না হয় কাল, কাল না হলে পরশু চাকরি সে একদিন পাবেই। অসুস্থ মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসার স্বপ্ন দেখতে থাকে জাহিদ। গল্পের শেষ পরিণতি দর্শককে ভাবিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে কাঁদিয়েছেও।
এই নাটকে অভিনয় করেছেন অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ, সাফা কবির, মনিরা মিঠু সহ আরও অনেকে।
গোল্ডেন এ+
তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন প্রায় ১০ বছর পর এবারের কুরবানি ঈদে তৈরি করেছেন নাটক ‘গোল্ডেন এ প্লাস’। মা-বাবার প্রত্যাশার চাপে কীভাবে শিশুদের শৈশব বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে, তা দেখা গেছে ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ নাটকে।
রেজাল্ট নিয়ে বাবা-মায়ের চাপে মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে কী করে শিশু কিশোররাও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তা নিয়েই নাটক ‘গোল্ডেন এ প্লাস’
নাটকটি নিয়ে একটি গানও রয়েছে। গানটি গেয়েছে চিরকুট ব্যান্ড। নাটকে শাওন চরিত্র দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে। সবাই মনে হয় নিজের বাল্যকালের সময়ে চলে গিয়েছিল নাটক দেখে। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও হারিয়ে গিয়েছিল এই নাটকের চরিত্রের মধ্যে।
‘গোল্ডেন এ প্লাস’ নাটকে অভিনয় করেছেন দীপক সুমন, দীপান্বিতা মার্টিন, অনিন্দ্য, ঈশান। নাটকটি ঈদের ষষ্ঠ দিন রাত সাড়ে নয়টায় চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয়েছিল। ইউটিউবে প্রকাশের পরও এই নাটকটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশ কয়েকদিন।