বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর সম্ভাব্য উৎক্ষেপণের তারিখ পিছিয়ে ৭ মে নির্ধারণ করা হয়েছে।
টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএবি) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ কথা জানান।
এর আগে উপগ্রহটি মহাকাশে সম্ভাব্য উৎক্ষেপণের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল ৪ মে।
তারিখ পেছানোর কারণ হিসেবে মোস্তাফা জব্বার বলেন: আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য আছে, ৪ তারিখ যে উৎক্ষেপণের তারিখ, তা ঠিক থাকছে না। এর আগেও অনেক বার সম্ভাব্য তারিখ পিছিয়ে সর্বশেষ ৪ মে উৎক্ষেপণের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু আবহাওয়াজনিত কারণে এই তারিখ পিছিয়ে নতুন সম্ভাব্য তারিখ ৭ মে। বিভিন্ন কারণে উৎক্ষেপণের তারিখ পেছাতে পারে এই ধারণাও আমাদের ছিলো।
এর আগেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কয়েকবার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখ পাল্টানো হয়েছিল।
উৎক্ষেপণের সময় বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডায় উপস্থিত থাকবে বলে জানান মন্ত্রী।
রাজধানী বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন মোস্তফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
মন্ত্রী আরও জানান, সম্ভাব্য তারিখ পরিবর্তন হলেও উৎক্ষেপণ উপলক্ষে দেশজুড়ে উৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্ত আগের মতোই রয়েছে। তবে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে সফল উৎক্ষেপণের পর রাজধানীর উল্লেখযোগ্য এলাকায় আতশবাজির উৎসব শুরু হবে।
এছাড়া ডিজিটাল আলোকসজ্জার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সব জেলায়ও এ উপলক্ষে উৎসব হবে।
সব মিলে অনুষ্ঠান আয়োজনে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। তবে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে বিটিআরসি থেকে সহায়তা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশের উদ্যোগও নেবে ডাক অধিদপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা’র কেপ ক্যানাভেরালে কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এটির কক্ষপথ হবে মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায়। স্যাটেলাইটটির নির্ধারিত স্লটে পৌঁছাতে আট দিন সময় লাগবে।
স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ এবং তা কক্ষপথে রাখার জন্য রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি স্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়েছে। প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য এই কক্ষপথ কেনা হয়।
উৎক্ষেপণের দায়িত্ব পাওয়া মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে পাঠানো হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির জন্য রাখা হবে। স্যাটেলাইটটি ১৫ বছর মেয়াদের মিশনে পাঠানো হচ্ছে।
এই কৃত্রিম উপগ্রহটি টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা দেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ট্যারিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল থাকা, পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ই-সেবা নিশ্চিত করবে।
স্যাটেলাইটের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হলে আশপাশের কয়েকটি দেশে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা দেয়ার জন্য জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেম (৪০ ট্রান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্র্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড)-এর গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে।