নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ শীর্ষক পাঠ্যপুস্তকে লেখা আছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘অগণতান্ত্রিক’ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন! নবম-দশম শ্রেণির ইতিহাস বই এর ২০৬ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে- “চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন নানা বিতর্কের জন্ম দেয়। এর বিপক্ষে বলা হয়। এর ফলে জাতীয় সংসদের ক্ষমতা খর্ব হয়, রাষ্ট্রপতিকে অসীম ক্ষমতা প্রদান করা হয় এবং একক রাজননৈতিক দল গঠন করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়”।
২১৩ নং পৃষ্ঠায় জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বঙ্গবন্ধু তাকে ‘বীর উত্তম’ উপাধি প্রদান করেন। আরও বলা আছে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘তাঁর’ সেনাবাহিনীতে জনপ্রিয়তা ছিল। জিয়াউর রহমান ‘মানসম্মত’ পোশাক, খাবার ও সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করেন। আরও লেখা আছে, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু সরকারের তুলনায় সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করেন এবং অফিসারদের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। পাঠ্য বইতে জিয়াউর রহমানকে ‘রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে উল্লেখ করা আছে।
১৫ আগস্ট এর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে লিখতে গিয়ে শুধু খোন্দকার মোশতাককে এককভাবে ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিশ্বাসঘাতক মোশতাকের সাথে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের যোগসাজশকে খুব কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতেন আগে থেকেই। খুনি কর্নেল ফারুক আর শাহরিয়ারকে জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে বলেছিলেন, ‘আমি সিনিয়র অফিসার হয়ে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে পারি না, তোমরা জুনিয়র অফিসাররা করতে চাইলে কর’।
সাংবাদিক এন্থনি মাস্কারেনহাস এর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিতে খুনি দুই কর্মকর্তার বক্তব্য ধারণ করা আছে। ইউটিউবে সার্চ দিলেই সেই ভিডিও আসবে। খুনিদের বাঁচানোর জন্য ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সামরিক শাসক জিয়া মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করেছেন। শুধু গোলাম আযম নয়, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে দিয়েছেন, সরকারি দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধপন্থী কত অফিসারকে জিয়াউর রহমান হত্যা করেছেন তার কোনো হিসেব নেই।
বঙ্গবন্ধুর বেঁচে যাওয়া দুই মেয়ে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে বাবার কবর জিয়ারত করতে দেয়নি জিয়া প্রশাসন, ৩২ নং বাড়িতে আসতে দেয়া হয়নি ৬ বছর। জিয়াউর রহমান ছাত্রসমাজের হাতে অস্ত্র এবং নগদ টাকা তুলে দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছেন। জিয়াউর রহমানকে দেশের হাইকোর্ট একজন অবৈধ সামরিক শাসক হিসেবে রায় দিয়েছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম নির্দেশদাতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। এগুলো কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, সত্য ইতিহাস। নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে জিয়াউর রহমানের নামের আগে খুব শ্রদ্ধার সাথে ‘রাষ্ট্রপতি’ ব্যবহার করা হয়েছে। হাইকোর্ট এর দেয়া রায়ের কোনো প্রতিফলন পাঠ্যপুস্তকে নেই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই! খোন্দকার মোশতাক আর জিয়াউর রহমানের যোগসাজশে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে এক বোন বাদে পুরো পরিবারকে হারিয়ে শোকের সাগরে ক্রমাগত ভেসে চলা শেখ হাসিনা কী বলেছেন হাইকোর্ট এর রায় সম্পর্কে?
২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনা বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী জিয়াউর রহমানকে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলা যাবে না। একই সঙ্গে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও ‘অবৈধ রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের সভার সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছিলেন। বিএনপির জন্ম গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘এ কথা ভুললে চলবে না, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছিল হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মাধ্যমে। জিয়ার ক্ষমতা দখল অবৈধ। সে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, আর্মি রুলস অ্যান্ড অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছিল। নিজেকে নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েছিল। শুধু তা-ই না, একাধারে সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপতি। একই অঙ্গে দুই রূপ নিয়ে রাষ্ট্র শাসন করেছিল। ঠিক আইউব খানের মতো।’
জিয়াউর রহমান ও এরশাদকে ‘অবৈধ রাষ্ট্রপতি’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা আরও বলেছিলেন, ‘হাইকোর্টের স্পষ্ট রায় আছে, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল অবৈধ। এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। তাই পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা হয়েছে। আর যারা একবার উচ্চ আদালত থেকে অবৈধ বলে ঘোষিত হয়েছে, তার মানে জিয়াউর রহমানকে যতই রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রপতি বলা হোক, তাকে কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতি বলা যবে না। যদি বলা হয়, তাহলে হাইকোর্টের রায়কে লঙ্ঘন করা হবে। কারণ তার ক্ষমতা অবৈধ। সে যেসব মার্শাল ল অরডিন্যান্স জারি করেছে, সংবিধান সংশোধন বা যেসব আইন করেছে, সব বাতিল বলে ঘোষণা হয়েছে। কাজেই এখন সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ বা জিয়াউর রহমান, কেউ কিন্তু আর সাবেক প্রেসিডেন্ট না। সেটা বলা যাবে না। কারণ তারা ক্ষমতা দখলকারী। উচ্চ আদালত যখন এই ঘোষণা দেয়, তখন সকলকে এটা মানতেই হবে।’
হাইকোর্টের রায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য অনুযায়ী এই পাঠ্যপুস্তক রচনার সাথে জড়িত প্রত্যেকেই উচ্চ আদালতের ঘোষণা তথা আদেশ লঙ্ঘন করেছেন। মহামান্য আদালত এক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেবেন? বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত করার জন্য, তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তি কৌশলে জিয়াউর রহমানকে সামনে এনেছে। জিয়াউর রহমানও ক্ষমতার শীর্ষে যেতে প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। তৎকালীন সংবাদমাধ্যমের একাংশ একদিকে বঙ্গবন্ধুকে পদ্ধতিগতভাবে বিতর্কিত করেছে, রাজনৈতিক-সামরিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে জাতির পিতাকে হত্যার পরিবেশ তৈরি করেছে। অন্যদিকে জিয়াউর রহমানকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। বাঙালিকে বিভক্ত করা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা এগুলো কি জানবে না? হুট করে পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুর বাকশালকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে আখ্যা দিয়ে প্রজন্মের সামনে তুলে ধরলে ইতিহাস বিকৃতি হয়, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে বৈধতা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদের একটি জবানবন্দি সম্প্রতি জনসম্মুখে এসেছে। খুনি আবদুল মাজেদ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার ভূমিকা দিবালোকের মত স্পষ্ট করে দিয়েছেন। পাঠ্যপুস্তকে এগুলো কেন অন্তর্ভুক্ত হবে না? কিসের সংশয়? নতুন প্রজন্ম কেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কুশীলবদের সবাইকে জানবে না?
বাকশাল নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে পদ্ধতিগতভাবে অপপ্রচার করা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের দোসর পাকিস্তানের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের মনে বঙ্গবন্ধুকে ‘ব্যর্থ’ রাষ্ট্রপতি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। অন্যদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো দেশে বঙ্গবন্ধু-বিরোধী অপশক্তিকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। এ দলগুলোর মধ্যে সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি, আব্দুল হকের পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি, মোহাম্মদ তোয়াহার সাম্যবাদী দল (এমএল), এবং জলিল-রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নাম উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির জয়লাভের পর ৩৮ বছর পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবমুক্ত করা দলিল থেকে প্রকাশ পেয়েছে যে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জার খোন্দকার মোশতাকসহসহ বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্রকে আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদানে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং মার্কিন সরকার এই চার চরিত্রকে আমরা যদি একই আতশি কাঁচের নিচে রেখে মনোযোগ দিয়ে দেখি, তাহলেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। বঙ্গবন্ধু বাকশালকে নিজে বলেছেন, ‘শোষিতের গণতন্ত্র’। আর সরকারের বইতে উল্লেখ আছে, বঙ্গবন্ধু ‘অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’র প্রণয়ন করেন!
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ, অর্থনৈতিক দর্শন, সমাজভাবনা সহজ করে লিখে প্রাসঙ্গিক পাঠ্যবইতে জরুরীভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানাচ্ছি। ‘মুজিববাদ’, ‘সমাজতন্ত্র’ এই শব্দগুলো ছোটবেলা থেকেই শিশুদের বয়স উপযোগী করে উপস্থাপনের দাবী জানাচ্ছি। নিজের উপরই প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। আগে কেন চোখে পড়ল না পাঠ্যপুস্তকের উপর। আসলে কল্পনাও করিনি, আওয়ামী লীগের আমলে পাঠ্যপুস্তকে এমনভাবে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে খণ্ডিত ইতিহাস লিপিবদ্ধ হবে। তবে আশার কথা হল, আমাদের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হোসেন চৌধুরী নওফেল এর নেতৃত্বে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। শুদ্ধি অভিযান চালাতেই হবে। পাঠ্যপুস্তক রচনার সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে এক জায়গায় করে আমাদের সাথে উন্মুক্ত সংলাপ আয়োজনের দাবী জানাচ্ছি। বয়স নয়, পদবী নয়, যুক্তি আর প্রমাণকে প্রাধান্য দিলে আশা করি কার্যকর ভূমিকা রাখা যাবে।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ একটি মানবিক, সমাজবাদী জীবনাচরণের আলেখ্য। বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেছিল কয়েকজন সেনা সদস্য। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মতাদর্শগত শক্ত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে বাংলাদেশ হত গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মিশেলে গড়া সোনার বাংলা। আর সমাজতান্ত্রিক সোনার বাংলা নির্মিত হলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর আরেকটি বড় পরাজয় হত। এই জন্য বঙ্গবন্ধু সরকারকে প্রায় সব শক্তি দিয়ে দুর্বল করার চেষ্টা চলেছে তখন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী রাজনীতির বিপরীতমুখী বাস্তবতার সৃষ্টি। সমাজতন্ত্রকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে হত্যা করতে চেয়েছে জুলফিকার আলী, খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান গং। আর আজ এতদিন পর নতুন প্রজন্মের সামনে বলা হচ্ছে, বাকশাল ছিল ‘অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’।
আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় যখন প্রায় ১২ বছর। নতুন মন্ত্রীদ্বয়ের প্রতি শুভকামনা রইল। প্রশ্নফাঁস আর নানা অনিয়ম বন্ধ করে ইতোমধ্যেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছেন সাবেক সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি। উচ্চশিক্ষিত শিক্ষামন্ত্রীকে যোগ্য সাহচর্য দিচ্ছেন আরেকজন উচ্চশিক্ষিত উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হোসেন চৌধুরী নওফেল। করোনাকালে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দারুণ মুন্সিয়ানা দেখাচ্ছেন। করোনাকালে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালু করে পুরো জাতিকে পথ দেখাচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, সময় এসেছে শিক্ষার মান নিয়ে কাজ করার। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককেই বঙ্গবন্ধুর মানবতাবাদী ও অসাম্প্রদায়িক আদর্শে উজ্জীবিত হতে হবে। শিশুদের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর মানবপ্রেম ও সমাজপ্রেমের বাণী পৌঁছে দিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর সৎ প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর অমর আদর্শের সঠিক বাণী শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে প্রোথিত হবে, এ বিশ্বাস আমাদের আছে। কিন্তু যারা এই বই এতদিন রচনা, সম্পাদনা আর ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত ছিলেন তারা এখন কোথায়? তারা কি এখনো আছেন বহাল তবিয়তে? বই এর সম্পাদনা পর্ষদের লেখা নামগুলো দেখে আমার বিস্ময় আকাশ ছুঁয়েছে। আমি আবারো এই ইতিহাসবিদগণের সাথে উন্মুক্ত সংলাপের আয়োজন করার দাবী জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শের সন্ধান পেয়ে শিক্ষার্থীরা একেকজন আদর্শবাদী হয়ে উঠবে এই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জাতি নির্মাণ করতে হলে যথাযথ টেক্সটবুক লাগবে, যথাযথ টেক্সট লাগবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে প্রতিটি বাংলাদেশী হতে পারেন সুনাগরিক। এজন্য ইতিহাস রচনা হতে হবে সত্যনিষ্ঠ ও দর্শন-সমৃদ্ধ। পরিশেষে, বাকশাল সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর নিজের উক্তি দিয়ে লেখা শেষ করছি।১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সংসদে বলেছিলেন “কেউ যদি মনে করেন যে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছি, তাহলে আমি বলবো, না। আজকে এখানে যে সিস্টেম করা হয়েছে, তাতে পার্লামেন্ট এর মেম্বাররা জনগণের দ্বারা, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন, তাঁকেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার আছে”। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ বাকশাল কর্তৃক আয়োজিত জনসভায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “জনগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। পার্লামেন্ট থাকবে। পার্লামেন্টের নির্বাচনে একজন, দুইজন, তিনজনকে নমিনেশন দেওয়া হবে। জনগণ বাছবে, কে ভাল, কে মন্দ”। “অ্যামেন্ডেড কনস্টিটিউশনে যে নতুন সিস্টেমে আমরা যাচ্ছি, তাও গণতন্ত্র। শোষিতের গণতন্ত্র। এখানে জনগণের ভোটাধিকার থাকবে। এখানে আমরা সমাজতন্ত্র করতে চাই। এখানে আমরা শোষিতের গণতন্ত্র রাখতে চাই। ২৬ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র, আমরা চাইনা শোষকের গণতন্ত্র”।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)