একটি স্বপ্ন দিয়ে লেখাটার শুরু করতে চাই। ধরা যাক, এদেশে পনেরই আগস্টের মতো কোনো বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তার বয়স এখন ছিয়ানব্বই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় কোথায় অবস্থান করতো?
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে একজন স্বাপ্নিক মানুষ হিসেবে আমি, আপনি-আমরা এধরনের কল্পনা করতেই পারি। এর কারণ বঙ্গবন্ধু নিজেই বাঙালি জাতিকে জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালির শত শত বছরের গোলামীর জিঞ্জিরকে তিনি ভাঙতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে তাড়িত হয়ে, বাঙালি স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন ।
বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তার দেখানো পথ ধরে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় কোথায় অবস্থান করত, এরকম প্রশ্ন অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সহ সাধারণ মানুষের। তারা বলছেন, স্বাধীনতার এই পঁয়তাল্লিশ বছরে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তার দেখানো পথ ধরে বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালি তো করতোই সেই সাথে দেশের সঙ্গে যুক্ত হত আরও অনেক অর্জন।
বিশিষ্ট উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ড.আবুল বারকাত দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতি ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিনি দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মৌলবাদী শক্তির বিস্তার ও তারা কিভাবে তাদের অর্থনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠছে। মৌলবাদের অর্থনীতিতে তিনি পরিস্কার সেসব চিত্রও তুলে ধরেছেন।
ড.আবুল বারকাত সম্প্রতি তার এক গবেষণায় বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আজ অর্থনীতিতে আধুনিক মালয়েশিয়াকেও ছাড়িয়ে যেত। তিনি তার গবেষণায় সেই চিত্রও তুলে ধরেছেন। এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, দেশ স্বাধীনের পর একটি পরাজিত গোষ্ঠী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাক পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করে।
এই হত্যাকাণ্ডের দেশী ও বিদেশী শক্তি কাজ করেছিল। বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে নেই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতি মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে অনেক গুণ ছাড়িয়ে যেত। ড. আবুল বারাকাত তার নিবন্ধ বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের নিরিখে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ’ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ আজ কোথায় দাঁড়াত ?
শীর্ষক প্রবন্ধে এসব কথার উল্লেখ করেছেন। তিনি তার প্রবন্ধে বলেছেন, কতগুলো অর্থনৈতিক চালক ও অনুমিতির সমন্বয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তাত্ত্বিকভাবে আমি এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছি। নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশ এবং তথ্যগতভাবে অর্থনৈতিক চিত্র ও উপাত্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার তুলনা করেছি।
যেখানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশ ও আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাত্ত্বিক ওই লেখচিত্রে বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন ( জিডিপি ) হওয়ার কথা ছিল ৪২ , ১৫৮ কোটি ডলার। আজকের বাংলাদেশের জিডিপি ৮,৮৫৫ কোটি ডলার আর মালয়েশিয়ার বর্তমান জিডিপি ১৫,৪২৬ কোটি ডলার। চিত্রে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসহ বাংলাদেশ মালয়েশিয়ারও বহুগুণ ওপরে অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা কি হারালাম অর্থনৈতিক তথ্য প্রমাণেও তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ঊনবিংশতম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ২০১৫’র দ্বিতীয় দিনের বিশেষ প্লেনারি অধিবেশন: ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি ও উন্নয়ন পুনর্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তার ‘বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের নিরিখে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ আজ কোথায় দাঁড়াত ? ” প্রবন্ধে ড, আবুল বারাকাত ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করে এসব কথা বলেন ।
উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত ড, আবুল বারকাত বলেন , বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুহীন এই বাংলাদেশের তুলনায় আমাদের জিডিপি প্রায় ৫ গুণ বেশি হতো । মাথাপিছু জিডিপিতেও আমাদের মালয়েশিয়াকে অতিক্রম করার কথা ছিল যা হওয়ার কথা ছিল প্রায় ৬০৬১ ডলার আর মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ৫৩৩৪ ডলার।
মূল চলকসমূহের নিরিখে ‘বঙ্গবন্ধুসহ ‘ আজকের বাংলাদেশ আজকের মালয়েশিয়াকে শুধু অতিক্রমই করতো তাই ই নয় বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের সমতাভিমুখী বৈশিষ্ট্যের কারণে তা হতো প্রগতিশীল বৈষম্য হ্রাসকারী মাথাপিছু উৎপাদন । যাকে বৈষম্য হ্রাসকারী মাথাপিছু প্রকৃত আয় হিসেবেও অভিহিত করা যায়।
বিশিষ্ট উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত তার পর্যবেক্ষণ ,বিশ্লেষণে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে দেশের যে অগ্রগতির সম্ভাব্য চিত্র এঁকেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত সিদ্বান্ত অ নির্দেশনায় দেশ যে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে তার অগ্রযাত্রা যদি অব্যাহত গতিতে ধাবমান থাকে তাহলে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর দেখানো সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)