জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করতে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে দেশের আদালতে ছুটি চলমান থাকায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাজেদের বিষয়ে ‘ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ কতৃক সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক আবেদন জানানো হলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে কেবলমাত্র ৮ এপ্রিল ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ছুটি বাতিল করা হয়।’
এরপর বুধবার দুপুরে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হেলাল চৌধুরী এই পরোয়ানা জারি করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন এই মাজেদ। তখন তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন।
এখন রীতি অনুযায়ী লাল সালু কাপড়ে ঢেকে মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছে দেওয়া হবে কারাগারে। পরবর্তীকালে কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ডিত আসামিকে পড়ে শোনাবেন সেই মৃত্যু পরোয়ানা। তখন দণ্ডিত আসামী বা তার পরিবারের সদস্যরা সংবিধানের আলোকে কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে বা প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে কারা কর্তৃপক্ষ কারাবিধি অনুযায়ী ফাঁসি কাযর্করের উদ্যোগ নেবেন।
অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদের বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় নিজ বাসা থেকে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন: ‘‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদকে মঙ্গলবার ভোর তিনটার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ‘প্রডিউস’ করা হয়। এরপর আদালত মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং পরে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে প্রেরণ করা হয়। আর এর আগে বিচারিক আদালত ও আপিল আদালত মাজেদকে ফাঁসির দণ্ড দেন। এখন ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদের ফাঁসির রায় কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। এই আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।’’
গতকাল দেয়া ভিডিও বার্তায় আইনমন্ত্রী আরও বলেন: ‘আমার কাছে প্রশ্ন এসেছে, আবদুল মাজেদ কারাগারে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে কি না? আসলে, আবদুল মাজেদ একজন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। যেহেতু ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের কারাগারে সলিটারি কনফাইনমেন্টে (নির্জন কারাবাস) রাখা হয়। যেহেতু আবদুল মাজেদ সলিটারি কনফাইনমেন্টে (নির্জন কারাবাস) থাকবে সেহেতু সে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে না।’
মাজেদের বিষিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন: মাজেদ শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যায় অংশগ্রহণ করেনি, সে জেলহত্যায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা রয়েছে। খুনের পরে জিয়াউর রহমানের নির্দেশ মোতাবেক সে বঙ্গভবন ও অন্যান্য জায়গায় কাজ করেছে।
ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত আরও পাঁচ খুনি বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন: খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
এর আগে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। সেই রায়ে আবদুল মাজেদসহ ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের দেয়া রায়ে ১২ আসামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। পরে ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। এরপর মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত পাঁচ আসামী রিভিউ আবেদন করেন। তবে সেই রিভিউ খারিজ করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই পাঁচ আসামী সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি) এর ফাঁসি ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর হয়।