ব্যবসায়ীদের কাছে ভ্যাট বাবদ বকেয়া ৩২ হাজার কোটি টাকার এক তৃতীয়াংশ আদায় করে বাকিটা মওকুফ করে দেওয়ার জন্য রাজস্ব বোর্ডের নিকট প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ বাস্তবায়ন বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তিনি এ প্রস্তাব দেন। মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইলের ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প অফিসের সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় মাতলুব আহমাদ বলেন, ৩২ হজার কোটি টাকার উপরে এনবিআরের কাছে ব্যাবসায়ীরা ঋণী। ১০ -১৫ বছরেও এর সমাধান হচ্ছে না। আমি প্রস্তাব রাখছি প্রত্যেক দেনাদার (ব্যবসায়ী) এ টাকার তিন ভাগের এক ভাগ দিলে বাকি টাকা যেন তাদের মওকুফ করে দেওয়া হয়। কারণ ২৬ হাজার মামলা ঝুলে আছে আমাদের মাথার উপর। নতুন আইনে যাওয়ার আগে এগুলো মিটমাট করলে ভাল হয়। কারণ নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে।
সেবা খাতের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট পুনঃবিবেচনার অনুরোধ করে তিনি বলেন, এতে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। যেমন- আইনজীবী, চিকিৎসক, তারা তো কোনো পণ্য সরবরাহ করছে না। তারা মেধা ও শ্রম ব্যয় করছেন। সেজন্য এ খাতের ভ্যাট কমানোর আলাদা চিন্তা করা দরকার।
মাতলুব আহমাদ আরও বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে এনবিআর কতৃক হয়রানি সরিয়ে দিচ্ছেন। আমরা বারবার বলে আসছি ১ টাকার ট্যাক্স দিতে ৩ টাকার হয়রানির শিকার হতে হয়। ভ্যাট অনলাইন চালু হলে সেখান থেকে মুক্তি পাবো বলে আশা করছি।
ভ্যাট না দেওয়া ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ৮ লাখের মধ্যে ৩০ হাজার ব্যবসায়ী ভ্যাট দেন এটা শুনতেও খারাপ লাগে, বলতেও লজ্জা লাগে। আমরা সবাই চাই ৮ লাখ রেজিস্ট্রেশন হলে ৮ লাখই ভ্যাট দেবে। সমস্যা কোথায়? সে সমস্যা সমাধানে ভ্যাট অনলাইন করা হয়েছে। এনবিআর থেকে বারবার বলা হচ্ছে, হয়রানি সরিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু মাঠে এ বার্তা পৌঁছাচ্ছে না। মাঠে হয়রানির বিষয়ে এনবিআরকে সর্তক থাকতে হবে। ভ্যাট অনলাইন চালু হলে আমাদের সাথে কর্মকর্তাদের দেখা হবে না।
ভ্যাট আইনকে আরো স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ভ্যাট অনলাইন সফল করতে হলে ব্যবসায়ীদের লাগবে। সেজন্য এ আইন যত স্পষ্ট হবে তত সুবিধা হবে। টার্নওভার সীমা দেড় কোটি করা দরকার। বন্দরে আমরা যে এটিভি (অগ্রিম ব্যবসায়ী ভ্যাট) দিতাম তা ফেরত পেতাম না। সেটা এ আইনে ফেরত পাবো সেজন্য এনবিআরকে ধন্যবাদ।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, এনবিআরের ভ্যাট থেকে শুরু করে সব আইন ব্যবসা, বিনিয়োগ ও শিল্পবান্ধব এর আওতায় রাজস্ব আহরিত হবে। ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প, বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।
তিনি বলেন, সৎ ব্যবসায়ীরা এনবিআরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন। দেশিয় শিল্প সুরক্ষা, রপ্তানিমুখী খাতকে প্রণোদনা দেয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আমরা কাজ করছি। নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যার নজিবুর রহমান।এসময় এনবিআরের সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন ভ্যাট আইন নিয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে।