ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলার উড়োজাহাজের ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা।
রাজধানী কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক রাজ কুমার ছেত্রি গণমাধ্যমকে তথ্যটি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্লেনটির ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছি। আমরা সেটি নিরাপদে রেখেছি।’ দুর্ঘটনার কারণ তদন্তের কাজও শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
সোমবার ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বোমবার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে ছেড়ে গিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে নেপালে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময়েই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
দুর্ঘটনার পর থেকেই এর জন্য ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ ও ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দায়ী করছে। ইউএস বাংলা বলছে, প্লেনটি অবতরণের সময় কন্ট্রোল রুম থেকে পাইলটদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হচ্ছিল। আর এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে ত্রিভুবন কর্তৃপক্ষের দাবি, পাইলটরাই অবতরণের সময় উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন।
এ ঘটনায় ইউটিউবে বিধ্বস্তের আগে ওই প্লেনের পাইলট এবং বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মধ্যকার কথোপকথনের একটি অডিও-ও প্রকাশিত হয়েছে। তবে ওই অডিও’র সত্যতা নিয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (Flight Data Recorder-FDR) একটি উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স (Black Box) নামক একটি রেকর্ডার ডিভাইসের অংশ। এটাতে ফ্লাইট সংক্রান্ত সব টেকনিক্যাল তথ্য ধারণ করা থাকে। ব্ল্যাক বক্সের আরেকটি অংশ ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (Cockpit Voice Recorder-CVR)। এই অংশটিতে প্লেনের ককপিটের ভেতর কী কথাবার্তা হচ্ছে সেগুলো রেকর্ড হয়।
ব্ল্যাক বক্স এতটা মজবুত ও সুরক্ষিত উপায়ে তৈরি করা হয় যেন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্লেন গুঁড়িয়ে গেলেও এই অংশটি যথাসম্ভব অক্ষত থাকে।
ব্ল্যাক বক্স থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনা কবলিত উড়োজাহাজের দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে অনেকাংশেই পরিষ্কার হওয়া যায়। তদন্তকারীরা আশা করছেন, উদ্ধার হওয়া এফডিআর ডিভাইসের তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউএস বাংলার এই উড়োজাহাজের বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে।
ওই উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫০। চিকিৎসাধীন যাত্রীদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উড়োজাহাজটিতে থাকা ৬৭ যাত্রীর মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশি, ৩৩ জন নেপালি, একজন মালদ্বীপের এবং একজন চীনের নাগরিক। উড়োজাহাজটিতে ৬৭ যাত্রীর পাশাপাশি ৪ জন ক্রু ছিলেন বলে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
দুর্ঘটনায় প্রথমেই মৃত্যু হয় ওই ফ্লাইটের সহকারি পাইলট এবং ইউএস বাংলার প্রথম নারী পাইলট প্রিথুলা রশিদের। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদকে। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ক্যাপ্টেন আবিদও মারা যান।