চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ফ্রান্সই কেন বারবার জঙ্গিদের টার্গেট?

বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রধান কারণ মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি নিধনে দেশটির তৎপরতা

ফ্রান্সের মধ্য প্যারিসে হামলাকারীর ছুরির আঘাতে স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় একজন নিহত এবং আরও ৪ জন আহত হয়েছে। পুলিশ বলছে, হামলাকারীর জন্ম ১৯৯৭ সালে, চেচনিয়ায়।

জঙ্গি সংগঠন কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) সরাসরি হামলার দায় স্বীকার না করে বলেছে, তার ‘যোদ্ধা’দের একজন হামলাটি চালিয়েছে।

২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে এভাবেই একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে আসছে ফ্রান্স। কনসার্টে হামলা, বাস্তিল দিবসের অনুষ্ঠানে ট্রাক নিয়ে হামলা, তারপর একে একে রেস্তোঁরায়, বারে, ইহুদি কোশার দোকানে, পত্রিকা অফিসে, মসজিদে, ট্রেনে, সুপারমার্কেটে, রাস্তায় গুলি ছুড়ে, বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, এমনকি ছুরিকাঘাত করে হামলার ঘটনা চলছেই।

এর আগেও অবশ্য ফ্রান্সে একাধিক হামলা চালিয়েছিল আইএস। কিন্তু ২০১৫ থেকে তার মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।

বেশিরভাগ হামলায় আইএস নিজেই দায় স্বীকার করেছে। কখনো বলেছে, তাদের পক্ষ থেকে তাদের কোনো যোদ্ধা হামলা চালিয়েছে। কখনো আবার আইএস বা অন্য কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একা বা কয়েকজন মিলে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে।ফ্রান্স-সুপার মার্কেটে হামলা-বীর পুলিশ কর্মকর্তা-ফ্রান্স-ফ্রান্সে জঙ্গি হামলা-সন্ত্রাসী হামলা

এভাবে গত প্রায় তিন বছরে ফ্রান্সে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় আড়াইশ’ মানুষ।

কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় কেন এত বেশি হামলার শিকার হচ্ছে ফ্রান্স?

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অন্যতম প্রধান কারণ মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি নিধনে ফরাসি বাহিনীর তৎপরতা। ইরাক, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে আইএসের দখলমুক্ত করার জন্য ফ্রান্সের সেনাবাহিনী টানা হামলা চালিয়ে আসছে।

অনেকের ধারণা ফরাসি বাহিনীর ‘ইটের’ জবাবে এই সন্ত্রাসী হামলাগুলো হলো আইএসের ‘পাটকেল’। এভাবেই নিজেদের ধ্যানধারণার শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়ায় আলাদা করে ফ্রান্সকে টার্গেট করছে আইএস।ফ্রান্স-ফ্রান্সে জঙ্গি হামলা-সন্ত্রাসী হামলা

তবে আরও একটি বিষয়কে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ঐতিহাসিকভাবেই ফ্রান্সকে দেখা হয় পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ উদারনৈতিক সমাজব্যবস্থার একটি দেশ হিসেবে। ইসলামি চরমপন্থিরা যুক্তরাষ্ট্রকে নৈতিক অবক্ষয় ও অর্থনৈতিক শোষণের উৎস হিসেবে দেখলেও ফ্রান্সকে দেখে ‘নাস্তিক বিশ্বশক্তি’ হিসেবে।

কেননা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর দৃষ্টিতে, ফ্রান্স নিজেরা একদিকে মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের মতো পশ্চিমা মতাদর্শের ধারক। অন্যদিকে এই মতাদর্শগুলো দেশটি ইসলামিক বিশ্বের ওপর চাপিয়ে দিতে সচেষ্ট।

তাই ‘নাস্তিকতাপূর্ণ’ ফ্রান্স যেন তার প্রচেষ্টায় সফল না হয়, সেজন্য বারবার আইএসের হামলার টার্গেট হচ্ছে দেশটি।ফ্রান্স-ফ্রান্সে জঙ্গি হামলা-সন্ত্রাসী হামলা

এছাড়াও ‘লোনলি উলফ’ বা একাকি নেকড়ে (স্বপ্রণোদিত হয়ে হামলা চালানো সন্ত্রাসী) হিসেবে হামলা করতে অনুপ্রেরণা দানের জন্য কুখ্যাত আইএস। দলটির পোপাগান্ডামূলক বার্তায় আকৃষ্ট হয়ে নৃশংস সব হামলায় জড়িয়ে যেতে দেখা গেছে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের তরুণদের।

এই লোনলি উলফ তৈরিতে ফ্রান্সের দিকে বর্তমানে আইএসের বেশি নজর বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা এই পদ্ধতিতে হামলা চালিয়ে ফ্রান্স সরকারকে ভয় দেখানো তুলনামূলকভাবে সহজ।