প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’-এর ২০১৯ সালের ৩০০ জন অনূর্ধ্ব-৩০ এশীয় উদ্যোক্তার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন দুই উদীয়মান ও সফল বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তা।
এদের একজন বাংলাদেশের অন্যতম রাইড শেয়ারিং সার্ভিস ‘পাঠাও’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন ইলিয়াস এবং অন্যজন ‘মোরশেদ মিশু’জ ইলাস্ট্রেশন’র প্রতিষ্ঠাতা কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু।
মোট ১০টি শিল্পখাতে ভাগ করে এই তরুণ উদ্যোক্তা ও উঠতি তারকাদের বাছাই করা হয়েছে। এবারের তালিকায় সবচেয়ে বেশি স্থান দখল করে আছে চীনের উদ্যোক্তারা (৬১ জন), এরপরেই রয়েছে ভারত (৫৯ জন)। প্রথমবারের মতো এবারের তালিকায় স্থান পেয়েছেন মঙ্গোলিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং লাওসের প্রতিনিধিরাও।
হুসেইন ইলিয়াস
হুসেইন ইলিয়াস এবং শিফাত আদনান মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাও। প্রথমে মোটরবাইক দিয়ে শুরু করে একে একে এটি পার্সেল সার্ভিস, কার রাইড, অন-ডিমান্ড লজিস্টিকস এবং ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে থাকে।
বর্তমানে পাঠাওয়ের শুধু মোটরবাইক আর কার রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বাংলাদেশের ৫টি শহর ও নেপালের কাঠমান্ডুতে অর্ধকোটি যাত্রীকে সেবা দিচ্ছে। তাই পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ‘কনজিউমার টেকনোলজি’ শাখায় হুসেইন ইলিয়াস স্থান পেয়েছেন ফোর্বসের অনূর্ধ্ব-৩০ উদ্যোক্তার তালিকায়। বয়স ৩০ বছরের বেশি হওয়ায় শিফাত আদনান এ তালিকায় আসতে পারেননি।
প্রকল্পের অন্যতম প্রধান অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইন্দোনেশিয়ার ‘গো-জেক’র অনুপ্রেরণায় ইলিয়াস স্বপ্ন দেখছেন পাঠাও হয়ে উঠবে বাংলাদেশের ‘সুপার অ্যাপ’।
পাঠাও এ পর্যন্ত চার রাউন্ডে ১ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি তহবিল পেয়েছে। কোম্পানিটির মূল্য বর্তমানে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি।
মোরশেদ মিশু
২০১৮ সালের শুরুর দিকে কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু বিশ্বজুড়ে চলমান ভয়াবহ বিভিন্ন যুদ্ধের ওপর কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করতে শুরু করেন। যুদ্ধের মর্মান্তিক ও যন্ত্রণাকর ছবিগুলো তার কলমের প্রতিভায় রূপ নিতে থাকে হাসি-আনন্দ ভরা শিল্পকর্মে। মিশুর আশা ছিল এসব কার্টুনের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা, যুদ্ধের নির্মমতা না থাকলে পৃথিবীটা কত সুন্দর হতো।
মিশুর আঁকা এসব কার্টুন ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর ‘গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ’ নামক তার এমনই একটি প্রজেক্ট পুরস্কার পায় এবং তারপরই বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীর জন্য কার্টুন আঁকতে শুরু করেন তিনি।
তারই ধারাবাহিকতায় মোরশেদ মিশু ফোর্বসের ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’ তালিকায় ‘মিডিয়া, মার্কেটিং অ্যান্ড অ্যাডভার্টাইজিং’ শাখায় স্থান পেয়েছেন।
বর্তমানে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান মোরশেদ মিশু ইলাস্ট্রেশন চালানোর পাশাপাশি দেশের জনপ্রিয় স্যাটায়ার ম্যাগাজিন উন্মাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন মিশু।
টানা চতুর্থবারের মতো এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৩টি দেশ এবং অঞ্চল থেকে দুই হাজার নামের মধ্য থেকে বাছাই করে ৩শ’ জন সফল তরুণ উদ্যোক্তা নিয়ে ২০১৯ সালের ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’ তালিকাটি প্রকাশ করেছে ফোর্বস এশিয়া।
ফোর্বস জানিয়েছে, এবারের তালিকা তৈরিতে শুধু উদ্যোক্তা হিসেবে সফল ব্যক্তিদেরই নির্বাচন করা হয়নি। বিশেষভাবে খোঁজা হয়েছে সেসব উদ্যোক্তাদের, যারা নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছেন; যাদের উদ্ভাবন ও প্রচেষ্টা শুধু নিজ দেশ বা অঞ্চলে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তনই আনছে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী একটি ইতিবাচক প্রভাব রাখার পথে কাজ করছে, বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও উদীয়মান বাজার ব্যবস্থায়।