একটি ফেসবুক লাইভ। তা থেকে উচ্চ আদালতে রিট। আর সেই রিটের তাৎপর্যপূর্ণ আদেশে বদলে যাচ্ছে অনেক কিছুই। মূলত দিন দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠছে, এ যেন তারই দৃষ্টান্ত।
এর শুরুটা হয়েছিল, বহু মানুষকে ছুঁয়ে যাওয়া ফেসবুক লাইভের একটি ঘটনা দিয়ে। সেটা ছিল সড়কের গা-ঘেঁষে থাকা বিপজ্জনক এক খুঁটি নিয়ে। তবে তার শেষটা হতে যাচ্ছে ইতিহাসের নতুন দৃষ্টান্তে।
সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। তার নাম সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে সিলেট থেকে ফিরছেন ঢাকায়। পথে নরসিংদীর শিবপুরে সড়কের মাঝে একটি বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক খুঁটি দেখতে পান তিনি।
গাড়ি থেকে নেমে ফেসবুক লাইভে এসে ওই খুঁটিটি সরাতে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। অবাক করা ঘটনা হলো, রাত পেরুতে না পেরুতেই সেই খুঁটি সরিয়ে ফেলে কর্তৃপক্ষ।
এতটা দ্রুততার সাথে খুঁটি সরানের সেই ঘটনা এই আইনজীবী নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন। আর তখনই ঘটে ভিন্ন ঘটনা! সারাদেশের বিভিন্ন এলাকার সড়কের মধ্যে থাকা বিপজ্জনক সব খুঁটির ছবি মানুষ পাঠাতে থাকে তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে।
এরপর সৈয়দ সায়েদুল হক মেসেঞ্জারে আসা সবগুলো খুঁটির ছবি এক সঙ্গে করে বুধবার হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন। ওই রিটে সারাদেশের সড়ক মহাসড়কের মধ্যে থাকা সব ধরনের বিপজ্জনক খুঁটি দ্রুত অপসারণ চাওয়া হয়।
সেই রিটের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে থাকা বৈদুতিক খুঁটিসহ সব ধরনের বিপজ্জনক খুঁটি সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেন।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া এ আদেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে আদালত এবিষয়ে একটি রুল জারি করেছেন। রুলে, সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে থাকা বৈদুতিক খুঁটিসহ সব ধরনের বিপজ্জনক খুঁটি চিহ্নিত করে অপসারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছ।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ ইন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেল মোখলেছুর রহমান।