ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বিদায় জানিয়েছে পুরো দেশ। বৃহস্পতিবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
বেলা এগারটায় প্রিয়ভাষিণীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে অাসেন মেয়ে রত্নেশ্বরী প্রিয়দর্শিনী,ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী, ছেলে কারু তিতাস, কাজী শাকের তূর্য।
শুরুতেই ঢাকা জেলার পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ অাওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রিয়ভাষিণীর যে ত্যাগ-তিতিক্ষা তা নতুন প্রজন্মের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার ভাস্কর্য শিল্পচর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে, শিল্প পেয়েছে এক নতুন মাত্রা। তিনি সারা জীবনভর মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ধারণ করে গেছেন, তা নতুন মাত্রিকতা পাবে। নতুন প্রজন্ম সে ধারায় সামিল হবেন।
তিনি বলেন, সাহস থাকলে যে সব বাধা অতিক্রম করা যায়, তার উদাহরণ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। তার উপর বারবার অাঘাত এসেছে, কিন্তু তিনি বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি জীবনভর লড়াই করে গেছেন।
সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে শ্রদ্ধা জানাতে অাসে বাংলাদেশ নারী পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, অাইন ও সালিস কেন্দ্র, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সামাজিক অান্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, অান্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান ইমরান এইচ সরকার। শ্রদ্ধা জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
এমিরেটাস অধ্যাপক অানিসুজ্জামান বলেন, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী একই সাথে সাহস ও সম্ভ্রমের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তার অবদান অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সংস্কৃতি চর্চায় তার ভাস্কর্য এক নতুন সংযোজন। নতুন প্রজন্ম তার সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে দেশকে অারো ভালোভাবে জানতে পারবে।
কামাল লোহানী বলেন, তিনি ছিলেন সাহসী নারীর প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের কথা লুকিয়ে না রেখে লোকসমাজে তা প্রকাশ করেছেন। নির্যাতিত নারীর পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার অনন্য অবদানের কথা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সাহসী নারী। পাকিস্তানিদের নির্যাতনের কথা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। অন্যান্য নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনে কাজ করেছেন। তার সামাজিক গুরুত্ব অনেক। যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি সবসময় সোচ্চার হয়েছেন।
শহীদ মিনার থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে। বাদ জোহর জানাজার পর তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী বলেন, ‘গত চারমাস আমার মা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। আকাশ বাতাস ফাল্গুন দেখেননি। আজ আপনারা উনাকে একটা ফাল্গুন দিয়েছেন। মায়ের জীবনটা কেটেছে সংগ্রামে। তার একটা আশ্রয়ের দরকার ছিল। আজ মা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের পাশে শেষ আশ্রয় পেলেন। তার কবরের পাশেই মাকে সমাহিত করা হবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অাগামী ১৩ মার্চ বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাগরিক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন, মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ।