ভারতের দেরাদুন আফগানিস্তানের হোমভেন্যু এক বছর ধরে। রোববার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হল সেখানে। স্থানীয় দর্শকরা নিজেদের দল মনে করেই উৎসাহ যুগিয়ে গেলেন সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দলটিকে। তাদের নিরাশ করলেন না আফগান ক্রিকেটাররাও। প্রথম টি-টুয়েন্টিতে নিজেদের শক্তির জানান দিয়ে সফরকারী বাংলাদেশকে ‘স্বাগতিক দল’রা হারিয়ে দিয়েছে ৪৫ রানে। তাতে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে থাকল আসগর স্ট্যানিকজাইরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: আফগানিস্তান- ১৬৭/৮; বাংলাদেশ- ১২২/১০
ফ্লাড লাইটের আলোয় টস হেরে ব্যাট করা আফগানিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ১৬৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে এক ওভার আগেই ১২২ রানে গুটিয়ে গেছে সাকিব আল হাসানের দল।
আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ চূড়ান্ত হওয়ার আগে থেকেই ‘রশিদ খান’ ‘রশিদ খান’ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা অবস্থা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। দেশ ছাড়ার আগে রশিদ প্রসঙ্গে প্রশ্ন শুনে বিরক্তিই প্রকাশ করেন অধিনায়ক সাকিব। ২২ গজে রশিদ-চ্যালেঞ্জ উড়িয়ে দেয়ার আভাস মিলেছিল তাতে। কিন্তু আসল লড়াইয়ে সেটি হয়নি। পরপর দুই বলে উইকেট তুলে নিয়ে টাইগারদের মিডলঅর্ডার গুঁড়িয়ে দেয়ার আসল কাজটি করেছেন এ লেগস্পিনারই। আর সাকিবের কথায় ‘ফেভারিট’ তকমা পাওয়া আফগানিস্তান পেয়েছে অনায়াস জয়।
শুরুর ধাক্কা সামলে টাইগাররা যখন লক্ষ্যের দিকে সমানতালে এগোচ্ছিল, তখনই বোলিংয়ে এসে প্রথম দুই বলেই রশিদ নেন মুশফিক (২০) ও সাব্বিরের (০) উইকেট। পরে ফেরান থিতু হয়ে যাওয়া মোসাদ্দেককে (১৪)। তাতে বাংলাদেশের হার হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার।
উইকেটে তেমন বাউন্স ছিল না। বল ব্যাটে এসেছে খানিকটা ধীরে। দেরাদুনে এমন চ্যালেঞ্জের মাঝেই ১৬৭ রানের লড়াকু পুঁজি গড়ে আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই তামিম ও সাকিবের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিটন ব্যাটে প্রতিরোধ গড়েও কাজ হয়নি তখন।
অফস্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি ওপেনার তামিম। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে এসে সাকিব আল হাসানও বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। ১৫ বলে ১৫ রান করে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শাহজাদের গ্লাভসে। মোহাম্মদ নবীর অফস্টাম্পের বাইরে পিচ করানো বলে স্লগ সুইপ করতে গেলে বল উঠে যায় উপরে। দলের রান তখন ২১।
পরে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে লিটনের জুটি যখন ফিফটির দিকে তখন খেই হারান। মোহাম্মদ নবীর বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়ার পরের বলটি রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে হন এলবিডব্লিউ। ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও একটি ছক্কার মার। ৬৪ রানে তিন উইকেট হারালেও ভরসা হয়ে জ্বলছিলে মি. ডিপেন্ডেবল। ২০ রান করে সেই মুশফিক ফিরে যাওয়ার পরই হারের চিত্রনাট্য এগোতে থাকে।
ইনিংসের ১০ ওভার পেরিয়ে যাওয়ার পর বোলিংয়ে এসে রশিদ খান দেখান ঝলক। প্রথম দুই বলে ফিরিয়ে দেন মুশফিক ও সাব্বিরকে। স্কোর হয়ে যায় ৮০/৫। ম্যাচে ফেরা কঠিন হলেও আশা টিকে থাকে মাহমুদউল্লাহ উইকেটে থাকায়। নিধাস ট্রফিতে এমনি অবস্থা থেকে একাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ টেনে বের করেছিলেন এ ডানহাতি। ২৯ রান করে তিনি ফেরার পর আশাটাও নিভে যায়।
এর আগে দেরুবেল-সাকিবের সাফল্যের পর মাহমুদউল্লাহর এক ওভারে জোড়া আঘাতে ধাক্কায় পড়া আফগানিস্তান ঘুরে দাঁড়ায়। মারকুটে সৌম্য সরকারকে বাইরে রেখে একাদশ সাজানো বাংলাদেশ টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু অধিনায়ক সাকিবের মুখে হাসি ফোটাতে পারছিলেন না কোনো বোলারই। প্রথম সাফল্য পেতে পাঁচ বোলারকে হাত ঘোরাতে হয়। পরে রুবেলের হাত ধরে আসে আরাধ্য উইকেট।
দুই পেসার রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ রাহির সঙ্গে পেস-অলরাউন্ডার আবুল হাসানকে একাদশে রেখেছে টাইগাররা। পেসেই আসে প্রথম সাফল্য। নবম ওভারে ২৪ বলে ২৬ করা উসমান ঘানিকে বোল্ড করেন রুবেল।
মোহাম্মদ শাহজাদ ও অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাই রানের গতিতে বেগ আনতে যাচ্ছিলেন। তখনই আঘাত সাকিবের। ৩৭ বলে ৪০ করা শাহজাদকে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানান টাইগার দলপতি। অবশ্য ৩৮ রানে থাকার সময়ই শাহজাদের ফিরতি ক্যাচ নিলে সাফল্য মেলে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের।
১৪তম ওভারে বোলিংয়ে এসে ভেল্কি দেখান মাহমুদউল্লাহ। দ্বিতীয় বলে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে (২) রাহির ক্যাচ বানানোর পর পঞ্চম বলে অফস্টাম্প নাড়িয়ে দেন রানের খাতা খুলতে না পারা মোহাম্মদ নবীর।
পরের সাফল্য আবু জায়েদের। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সামিউল্লাহ সেনওয়ারিকে মোসাদ্দেকের ক্যাচ বানান তিনি। ৩টি করে চার-ছয়ে ১৮ বলে ৩৬ রানের ঝড় তুলে ফেরেন সেনওয়ারি। শেষদিকে ঝড় তোলা শফিকউল্লাহ শফিককে বোল্ড করেন আবুল হাসান। ৩ ছয় আর এক চারে ৮ বলে ২৪ করে যান শফিক।
আবু জায়েদ একটি উইকেট পেলেও ৪ ওভারে খরচ করেছেন ৪২ রান। রুবেলের এক উইকেট পেতে ৪ ওভারে খরচ ৩২। সাকিব দারুণ করেছেন, নিজের কোটা পূরণ করে এক উইকেট নিতে দিয়েছেন মাত্র ১৯ রান। মোসাদ্দেক এক ওভারে দিয়েছেন ৩ রান। আর জোড়া আঘাতের ওভার করা মাহমুদউল্লাহ ২ উইকেট নিয়েছেন এক রানে।
রোববার সকালে মালয়েশিয়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। একইদিনে হার দিয়ে শুরু হল টাইগারদের আফগানিস্তান সিরিজ। ক্রিকেটে বাংলাদেশ কাটিয়েছে হতাশার একটি দিন। মঙ্গলবার একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে সাকিব আল হাসানের দল। সিরিজ বাঁচাতে জয়ের বিকল্প নেই যে ম্যাচে।