আসছে পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিন। নাগরিক ব্যস্ততার আড়ালে মৃদু হাওয়ায় ভেসে আসা ফুলের গন্ধ জানান দিচ্ছে ঋতুরাজের আগমনী বার্তা। নগরজীবনে বসন্তের ছোঁয়া আমরা পাই বা না পাই, প্রকৃতিতে তার স্পর্শ লেগেছে নিঃশব্দে। আর একইসঙ্গে বাজে শীতের বিদায়ের সুর। পহেলা ফাল্গুনকে সামনে রেখে পুরো দেশজুড়ে চলছে ফুলের বিকিকিনি। চ্যানেল আই অনলাইনের ক্যামেরায় উঠে এসেছে শাহবাগের ফুলের পাইকারি বাজারের চিত্র।
বসন্ত মানেই পূর্ণতা, নতুন প্রাণের কলরব। বাঙালি মন রঙিন হয়ে হঠে বাসন্তী রঙে। এই উৎসব ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। পহেলা ফাল্গুন সামনে রেখে এখন চাঙ্গা রাজধানীর অন্যতম ফুলের বাজার, শাহবাগ। শাহবাগ শিশু-পার্কের আগে ফুট ওভারব্রিজের পাশে সকালটা যেন ফুলময়। নানা ধরনের ফুলের সমারোহে শাহবাগ সাজে এক নতুন রূপে। দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ফুলের বাজার। সকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে ফুলের এই বাজার।
রবিবার সকালে এই ফুলের বাজারে ছিল উপচে পড়া ভিড়। চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিক্রেতারা আগে থেকেই বেশি করে ফুল নিয়ে এসেছেন। শাহবাগে ফুলের বাজারে রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা, কেলোনজরা, চন্দ্রমল্লিকা, লাল ও সাদা গোলাপ, বেলি, কামিনী, সূর্যমুখী, ডায়মন্ড, রতপুসুটি, টুনটুনি, জিপসি, স্টার-কলি, ডালিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি হয়। এর মধ্যে বসন্তে চাহিদা বেশি হলুদ রঙের গ্লাডিওলাস, গাঁদা, জিপসি ফুলের।
ক্রেতা ও বিক্রেতার, বিশেষ করে খুচরা বিক্রেতার বড় এক মিলন মেলা এই ফুল বাজার। ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বললেন ‘এবার ফুলের চাহিদা বেশি বেড়েছে। এ মাসের শুরুতে ফুলের যে দাম ছিল, এখন তার চেয়ে অনেকটা বেড়েছে’।
ফুল ব্যবসায়ী লিটনের কাছে জানা গেল ফুলের দামের বিস্তারিত। রজনীগন্ধা এক বান্ডিলের দাম ২২০-২৫০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রজাতি ভেদে দামে পার্থক্য রয়েছে, সাদা ৭০০ টাকা আর লাল ৪০০ টাকা শত। ৮০০ গাঁদা ফুলের এক বান্ডিলের দাম মাত্র ১২০ টাকা। বিদেশি ফুলের মধ্যে জারবেরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি শ’ ৭০০-৮০০ টাকা।
দেশে উৎপাদিত ফুল দিয়েই অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ সম্ভব। তবে বিশেষ উৎসবে ফুলের চাহিদা বাড়লে থাইল্যান্ড, ভারত, চীন থেকে ফুল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে চায়না রোজ, মাম, কারনেশন, জারবেরা, হোয়াইট রোজ, ইয়েলো রোজ রয়েছে। তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব ফুলও আমদানির প্রয়োজন হবে না। দেশেই উৎপাদিত হবে বলে মনে করছেন ফুল চাষি ও বিক্রেতা।
ফুল নাকি পবিত্র আর ফুলের ব্যবসাও পবিত্র। এমন পবিত্র ব্যবসায় জড়িয়ে আছে বহু প্রান্তিক মানুষ। এমনই একজন মরিয়ম। ৪০০ টাকার ফুল কিনেছেন তিনি। তার কাজ ফুল মালায় গেঁথে তা বিক্রি করা। ৪০০ টাকার ফুল দিয়ে মালা গেঁথে তিনি এক হাজার কিংবা তারও বেশি টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান সে।
সারা বছরে নিয়মিত খুচরা বিক্রেতা আসেন এই বাজারে। তবে অনেক মৌসুমি খুচরা ফুল বিক্রেতারও দেখা মেলে বিশেষ করে পহেলা ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইনস ডে’র আগ দিয়ে । মৌসুমি এই ফুল বিক্রেতা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উৎসবে ফুল কিনে বিক্রি করি। এবারও জারবেরা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস ও কিছু জিপসি কিনেছি। মৌসুমি এই বিনিয়োগে আমি ভালই লাভ করছি।’