চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ফুটবল কলঙ্কে সমালোচনার কেন্দ্রে কাজী সালাউদ্দিন

বাংলাদেশে ফুটবলকে নতুন জীবন দিতে হলে সবার আগে ফুটবল ফেডারেশনের পুনর্গঠন জরুরি বলে সাবেক ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠকরা মনে করছেন। তারা বলছেন, দেশের গৌরবময় ফুটবলকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। ফুটবলকে বাঁচাতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে জাগরণ ঘটাতে হবে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে শুধু ফুটবলকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলেই চলবে না, ফুটবলকে ঘিরে দুর্নীতিরও তদন্ত করতে হবে। এজন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

গত ১০ অক্টোবর এএফসি এশিয়া কাপ প্লে-অফ-২-এর অ্যাওয়ে ম্যাচে ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ। এ পরাজয়কে দেশের ফুটবল ইতিহাসে চরমতম কলঙ্ক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছেে। পরাজয়ের কারণে বাংলাদেশ আগামী প্রায় তিন বছর ফিফা বা এএফসি’র কোন পর্যায়ে ফুটবল খেলতে পারবে না। এর অর্থ নিজেরা কোন টুর্নামেন্ট আয়োজন না করলে তিন বছর একরকম আন্তর্জাতিক ‍ফুটবল থেকে নির্বাসিত থাকবে বাংলাদেশ।

ফুটবলভক্তদের মধ্যে এখন একটাই প্রশ্ন: কেন এরকম অবস্থা হলো?

নেপাল এবং ভুটান যেখানে একাডেমি করে ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে বাফুফে’র কেন একটা ফুটবল একাডেমি গড়ে উঠলো না সেই প্রশ্নও আলোচিত হচ্ছে সব জায়গায়। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় আশরাফুদ্দিন চুন্নু চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন কাজী সালাউদ্দিন, উনি অনেক স্মার্টলি কথা বলেন, আমরাও তাকে পছন্দ করি।

‘কিন্তু, ফুটবল মাঠে দল ক্যামোন খেলবে বা খেলে সেটা চিন্তা না করে তিনি ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। তার স্বপ্নগুলো সবই আকাশ কুসুম তাই বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চুন্নু বলেন, গত দশ-পনেরো বছর ধরে ফুটবলের উন্নয়নের অনেক কথা বলেছি যা বাফুফে কোনো আমলেই নেয়নি। এখন বাংলাদেশ ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৮৫, এভাবে দেশের ফুটবল চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিং ২০৫-এ পৌছে যাবে বাংলাদেশ।

চুন্নু বলেন, ফুটবলটা বাংলাদেশের গৌরবময় খেলা, এই খেলাটাকে এভাবে হারিয়ে যেতে দেওয়া যায় না। আমাদের বাফুফে কর্মকর্তারা মনে করেন শুধু ঢাকায় ফুটবল নিয়মিত করলেই ফুটবলের উন্নতি হবে।

‘ফুটবলে যে সীমাহীন ব্যর্থতা, এজন্যে বাফুফের কর্তা ব্যক্তিরাই পুরোটার জন্য দায়ী,’ বলে মনে করেন সাবেক এ তারকা ফুটবলার।

ভুটানের কাছে পরাজয় অবশ্য হুট করে ঘটা কোন দুর্ঘটনা নয়। এটা ক্রিকেটে হঠাৎ করে কানাডা বা হংকং এর কাছে হেরে যাওয়া নয়। ক্রিকেটে ওইসব পরাজয় দুর্ঘটনা। কিন্তু, গত কয়েক বছরে জাতীয় ফুটবল দলের ফলাফল বিবেচনায় আনলে দেখা যাবে ভুটানের কাছে হার অনেকদিনের ব্যর্থতার পরিণতি।

বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে আট ম্যাচে ৩২ গোল হজম করেছে। এর মধ্যে জর্ডানে গিয়ে খেয়েছে আট গোল, সাফে আফগানিস্তানের সঙ্গে চার, তাজিকদের কাছে পাঁচ গোল। সর্বশেষ মালদ্বীপের কাছেও বাংলাদেশকে পাঁচ গোল হজম করতে হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভুটানের কাছে পরাজয়, যে ভুটানকে একসময় হেসেখেলে বড় ব্যবধানে হারাতো বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ফুটবলের সেই সুদিন ফেরাতে হলে কী করণীয় এমন প্রশ্নের উত্তরে চুন্নুকে প্রতিধ্বনিত করেছেন বাংলাদেশের সেরা ফুটবল বিশ্লেষক ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু। তিনিও বলেছেন, এগুলোর জবাব দেবেন সালাউদ্দিন।

আক্ষেপের সুরে টিপু চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: অনেক আগেই যে পরিকল্পনা, যে উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল, ফুটবলে সেই পরিকল্পনা আর উদ্যোগের কথা এখন বলা হয়। বাফুফে’র পরিকল্পনার অভাব, কোচ নিয়োগে দুরদর্শিতার পরিচয় দিতে না পারা, জাতীয় দলকে ঢেলে সাজাতে না পারা- এসব কারণেই ফুটবলে বর্তমান দুরবস্থা তৈরি হয়েছে।

টিপু বলেন, দেশের ফুটবলের হারানো গৌরব ফেরাতে হলে অবশ্যই তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলকে পৌছে দিতে হবে। প্রতিটি জেলায় লিগের আয়োজন করতে হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকে যদি প্রতি বছর তিন থেকে চারজন ফুটবলারও উঠে আসে তাও দেশের জন্য ভালো হবে।

ক্লাব ফুটবল নিয়ে ফুটবল বিশ্লেষক গোলাম সরোয়ার টিপু বলেন, আমাদের ফুটবলের ক্লাব স্ট্রাকচার জঘন্য। বিদেশী কোচ, কোচিং স্টাফ থাকার পরও খেলোয়াড়রা নিজেদের ভিশন নিয়ে কাজ করে না। আসলে খেলোয়াড় সংকটের জন্যই আজ দেশের ফুটবলের এই অবস্থা।

কেউ কেউ শুধু একসময়ের দেশসেরা ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনের সমালোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকলেও বাংলাদেশের ফুটবলের স্বার্থে সরাসরি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করেছেন সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, বাফুফে নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছে কাজী সাহেবের প্যানেল। তারা ফুটবলের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কোনো কাজই করেননি।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পুনর্গঠন দাবী করে তিনি বলেন, অযোগ্য টাকালোভী কিছু কর্তাব্যক্তি বাফুফে চালাচ্ছে, তাদের ছাঁটাই করতে হবে। ফুটবলের উন্নয়নের জন্য সাবেক খেলোয়াড়দের সম্মানজনক পদ-পদবী দিয়ে বাফুফেতে আনতে হবে।

ফুটবল ফেডারেশনকে দুর্নীতির আঁখড়া হিসেবে উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উচিত বাফুফের দুর্নীতির অনুসন্ধান করা। যদি প্রয়োজন হয় তবে যেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহযোগিতাও চাওয়া হয়।

ফুটবলের এরকম অবস্থা এবং চারদিকে সমালোচনার ঝড়ের মধ্যে বাফুফে’র নীতি নির্ধারকরা কী ভাবছেন?

চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে বাফুফে’র প্রভাবশালী বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের বেশিরভাগই ফোন ধরেননি। তবে, মুঠোফোনে কথা বলেছেন বাফুফে সহসভাপতি বাদল রায়।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, দেশের ফুটবলের স্বার্থে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না, আমরা ভেবে চিন্তে দেখছি কী করা যায়। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে সব জানানো হবে।

গত ১০ অক্টোবর ভুটানের কাছে ন্যাক্কারজনক পরাজয়ের পর বাফুফে প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিন মুঠোফোনে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছিলেন, মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) তিনি সংবাদ সম্মেলন করে সবকিছু বলবেন।

সেই সংবাদ সম্মেলন এখনো ডাকা হয়নি।