চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ফুটবলের বিপর্যয়ে মামুন জোয়ারদারের আফসোস এবং….

কানাডার সময় তখন রাত আড়াইটা। ঢাকায় ফোন এককালের জাতীয় দলের খেলোয়াড় মামুন জোয়ারদারের। অনেকদিন ধরে কথা হয় না তার সঙ্গে। তিনিসহ জাতীয় দলের সাবেক অনেক ফুটবলারই এখন স্থায়ীভাবে থাকছেন কানাডায়। কেমন আছেন প্রশ্নে, মামুন জোয়ারদারের কন্ঠ জড়িয়ে গেলো। গলার স্বর নামিয়েই বললেন, ভালো কি থাকতে পারি।

কেনো, কোন সমস্যা? ভেবেছিলাম, হঠাৎ ব্যক্তিগত কোন সমস্যায় পড়েছেন কী না সাবেক এই ফুটবলার!

মামুন জোয়ারদার বললেন, তা নয়। দেশের ফুটবলের কথা চিন্তা করে ঘুম আসছে না। বলেন তো, এটা কি হলো? এতো নীচে নেমে গেলো কেনো ফুটবল? আমি কষ্ট চেপে রাখতে পারছি না বলেই আপনাকে ফোন করলাম, বুকটা হালকা করার জন্যে। এটা কোন কথা হলো, ভুটানের সঙ্গে তিন গোল খায় বাংলাদেশ? এরপর ৩ বছর নাকি আর্ন্তজাতিক ফুটবল থেকেও নির্বাসিত থাকতে হবে?

মামুন জোয়ারদার ফিরে গেলেন তার স্মৃতিতে: ‘ভুটানকে কখনই আমরা গোনায় ধরতাম না। তাদেরকে ডেকে ডেকে গোল দিয়েছি। ভুটানের সঙ্গে আমাদের মেইন টিমও খেলেনি। অনেক সময়ই খেলতো অতিরিক্ত খেলোয়াড়রা। এতো বছর পর একি ঘটনা! কেনো এমন হলো, কষ্টে বুকটা খান খান হয়ে যাচ্ছে।’

মামুন আরও বললেন, আজ কথা বললাম মিজানের (জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার) সঙ্গে। ফোন দিলাম রকিবকেও( জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড)। কারোই বিশ্বাস হচ্ছে না। কেউ মানতে পারছে না এমন অঘটন।

ক্রিকেটের ডামাডোলে ক্রীড়ামোদীদের দৃষ্টি ফুটবলের দিকে নেই। এটিই হয়তো ফুটবল কর্তাদের আপাতত রক্ষাকবচ। তারা হয়তো এই সুযোগটাই নিচ্ছেন। ভাবছেন ফুটবলে মানুষের নজর নেই। ৯৩-এর সাফ গেমসে ফুটবল পদক হারানোর পর খেলোয়াড়রা সমর্থকদের রুদ্ররোষ থেকে বাঁচতে এদিক সেদিক পালিয়ে বেঁচেছিলেন। ফুটবলের দুরবস্থা এখন এতটাই চরমে, সামনে ফুটবলার পেলেও তাদের হয়তো চিনতে পারবেন না অনেকে। এরপরও ভুটানের সঙ্গে এমন বিপর্যয় কোন ক্রীড়ানুরাগীই মেনে নিতে পারছেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্চারিত হচ্ছে সে ক্ষোভ।

ফুটবলের যে সর্বনাশটি হয়ে গেলো এটি কি আর সহজে শোধরানো যাবে? তিন বছর আর্ন্তজাতিক ম্যাচ খেলতে পারবে না, এটি চরম দুঃসংবাদ। এর চেয়েও বড় প্রশ্ন- এ অবস্থা থেকে ফুটবল উঠে দাঁড়াবে কিভাবে? ভুটান ফুটবলের কফিনে শক্ত একটি পেরেকই ঠুকে দিয়েছে। যেটি শুধু লজ্জার নয়। কষ্টের। বেদনার এবং ক্ষোভেরও।

চোখের সামনেই জার্মানির সহায়তা নিয়ে নেপাল আমাদের ছাড়িয়ে গেলো। এখন ভুটানও যাচ্ছে। আর আমরা বিদেশী সহায়তা ব্যবহার করতে পারি না। কারা এসব কাজে জড়িত? কদিন আগেও যারা সমর্থকগোষ্ঠীর নেতা ছিলেন, তাদের অনেকেই নাকি ফুটবলের বড় পরামর্শক। তাহলে, ফুটবলের এ হালতো হবেই। কাজী সালাউদ্দিন যে সময়ে দেশের বাইরে ফুটবল খেলতে গেছেন, সে সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার কতজন খেলোয়াড় এমন যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলেন? মুন্নার মতো ঈস্ট বেঙ্গলের হয়ে কলকাতার মাঠ কাঁপানো খেলোয়াড় দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশে কতজন ছিলেন বা এখনও আছেন? দিনে দিনে যখন উন্নতি হওয়ার কথা, তখন চরম অধোগতিই কেবল।

এর কারণ ফুটবল কর্মকর্তাদের অদক্ষতা। ফুটবল দলের এতো বড় বিপর্যয়ের পরও তাই তারা নির্বিকার থাকতে পারেন। দল হারার ২৪ ঘন্টার মধ্যেও কোন একজন কর্মকর্তার স্বতস্ফুর্তভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার ঘটনা ঘটলো না। ফুটবলই যদি আর্ন্তজাতিক ময়দানেই না থাকে তিন বছর, তাহলে কোন মধুর লোভে পদ আঁকড়ে পড়ে থাকবেন কর্মকর্তারা? কাজী সালাউদ্দিনের টিম দিয়ে ফুটবল আর চলছে না।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)