প্রথম ১১ ম্যাচে পাননি কোনো ফিফটি। ছন্দ হারিয়ে ফেলা একজন ব্যাটসম্যানকে বিশ্বকাপ দলে রাখা ঠিক হল কিনা, জোরেশোরেই উঠেছিল এমন আলোচনা। জবাবটা ব্যাটেই দিলেন সৌম্য সরকার। টানা দুই সেঞ্চুরিতে শেষ করলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। যার একটি আবার রেকর্ড গড়া দ্বিশতক।
মঙ্গলবার বিকেএসপিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে সৌম্য সেঞ্চুরিকে রূপ দিয়েছেন ডাবলে। আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন ২০৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। অথচ ছন্দে ফিরতে একটি ফিফটির আশাতেই নাকি ছিলেন এ বাঁহাতি ওপেনার।
সৌম্য জানালেন বাজে সময় পেছনে ফেলে ফর্মে ফেরার পেছনে কাজে লেগেছে পঞ্চাশের লক্ষ্যে আগানো, ‘আগের ম্যাচগুলোয় রান করিনি (রোববার রূপগঞ্জের বিপক্ষে ১০৬ রানের ইনিংস খেলার আগে), এখন করছি। আক্ষেপ হচ্ছিল। শুরুতে ৩০–৪০ করে আউট হচ্ছিলাম। মাঝে কিছু ম্যাচ ১,২,০ রানে আউট হয়েছি। পরে মনে হল ১,২,০ রানের চেয়ে ৩০–৪০ ভালো, ওটাতে আগে ফিরতে হবে। যখন ৩০-৪০ রান করেছি, তখন মনে হয়েছে আজ এই রানে ফেরা যাবে না। আজ ৫০ করতেই হবে। মাঠেই পরিকল্পনা করেছি। আগ থেকেই পরিকল্পনা করে গেলে হচ্ছিল না। চিন্তা করছিলাম, উইকেট ভালো ছিল। সুযোগ ছিল রানটা বড় করার।’
‘প্রথমে একটু নার্ভাস ছিলাম যে ৩০০ টার্গেট। ৩০০ রানের বেশি তাড়া করা সব সময়ই কঠিন। ব্যাটিংয়ে যাওয়ার আগে ভাবছিলাম আগের ম্যাচে আমরা ৩০০ করেছিলাম, রূপগঞ্জ একটু তাড়াহুড়ো করেছিল। পাওয়ার প্লে-তে উইকেট যাওয়াতে সেভাবে তাড়া করতে পারেনি। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভালো। আমরা পরিকল্পনা করছিলাম খুব স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলব।’
‘প্রথম ১০ ওভারে যদি ৪০ রানও হয় কোনো সমস্যা নেই। এই উইকেটে যখন–তখন মারা যায়। সব ব্যাটসম্যানের এই সামর্থ্য আছে। আর উইকেটটা খুব ভালো ছিল। বল ব্যাটে আসছিল। চেষ্টা করেছি বড় জুটি করতে, যেন ২০ ওভারের মধ্যে এমনকিছু করা যায়, যাতে পরের ৩০ ওভার সহজ হয়।’ -কীর্তির পর বলে চলেন সৌম্য।
১১ ম্যাচে মোটে ১৯৭ রান করায় সমালোচনার তীর ছিল সৌম্যর দিকে। এদিন স্বস্তির বাতাস বইয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে যাওয়ার আগে প্রত্যাশা ছাপিয়ে নতুনরূপে আবির্ভূত হলেন টাইগার ওপেনার। আগুনে ব্যাটিংয়েই ফিরলেন ফর্মে।
মঙ্গলবার বিকেএসপিতে লিগের শেষ ম্যাচে শেখ জামালের বিপক্ষে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের দিনে ৫২ বলে ফিফটি পূর্ণ করা সৌম্য সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে খেলেন আর মাত্র ২৬ বল। পরের ২৫ বলে পৌঁছান দেড়শতে। ১৪৭ বলে ছুঁয়ে ফেলেন ডাবল।
তানবীর হায়দারের সেঞ্চুরিতে (১৩২*) আবাহনীকে ৩১৮ রানের টার্গেট দেয় শেখ জামাল। জবাব দিতে নেমে সৌম্য ও জহুরুল ইসলাম অমির ওপেনিং জুটিতেই আসে ৩১২ রান। যা লিস্ট-এ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি।
দলকে জয়ের খুব কাছে রেখে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে আউট হন জহুরুল। ১২৮ বলে ১০০ রানের পথে এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মারেন সাতটি চার ও তিনটি ছক্কা। তিনে নেমে সাব্বির রহমান ৭ বল খেলে কোনো রান না করে থাকেন অপরাজিত।
ছক্কার বৃষ্টি নামিয়ে ১৫৩ বলে ২০৮ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন সৌম্য। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তির দিনে দলকে পাইয়ে দেন ৯ উইকেটের সহজ জয়। শেখ জামালের দেয়া ৩১৮ রানের লক্ষ্য মামুলি বানিয়ে ফেলেন দুর্দান্ত সব শট খেলে। মারেন ১৬টি ছক্কা আর ১৪টি চার।
জহুরুল ইসলামের সঙ্গে ৩১২ রানের ওপেনিং জুটিতে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। রান তাড়ায় ট্রিপল সেঞ্চুরি জুটির লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড এটিই প্রথম।