বিপিএলের পঞ্চম আসরে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার রংপুর রাইডার্স। নিজের চতুর্থ বিপিএল শিরোপা অর্জনের হাতছানি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের সামনে। আরেকটি অর্জনের লড়াইয়ে নামার আগে মাশরাফী ফিরে তাকালেন একটু পেছনে।
‘পেছনে যদি তাকাই, এবার ফাইনাল খেলতে পারব চিন্তাই করিনি। পুরো কৃতিত্ব দলের ক্রিকেটারদের দেয়া উচিত। বিদেশি খেলোয়াড়রা নিজ থেকে গিয়ে স্থানীয়দের নানা পরামর্শ দিয়েছে। দলীয় প্রচেষ্টার কারণেই ফাইনালে আমরা।’
দলে গেইল-ম্যাককালামের মতো বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান থাকলেও রংপুরের টুর্নামেন্ট শুরুটা ভাল ছিল না। সেভাবে জ্বলে উঠতে পারছিলেন না তাদের কেউই। শেষ চারে জেতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে। স্থানীয় ও বিদেশি ক্রিকেটারদের ছোট ছোট অবদান, আর দলগত পারফরম্যান্সে কয়েকটি ক্লোজ ম্যাচ জিতে নিজেদের পথে রেখেছে দলটি।
বিদেশি ব্যাটসম্যানরা এমন সময় জ্বলে উঠলেন, যখন কিনা টুর্নামেন্ট নকআউট স্টেজে। তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি এসেছে গেইলের ব্যাটে, সেটিও আবার এলিমিনেটর ম্যাচে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেঞ্চুরি করেছেন জনসন চার্লস। এ ম্যাচেই ম্যাককালাম ছন্দে ফিরেছেন ৪৬ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে।
‘আগের কয়েকটি প্রেস কনফারেন্সে বলেছি যে, ওদের জন্য এখানে ভাল করা কঠিন। যেভাবে ওরা আজ খেলেছে, এটাই ওদের ন্যাচারাল গেম। হয়তবা একটা মিস হিট হলে আউট হয়ে যেতে পারত। এই জন্যই ওরা এ ফরম্যাটের সব টুর্নামেন্টে সবার আগে ডাক পায়। ওদের দিনে বড় রকমের আগ্রাসন চালাতে পারে। প্রথম সেমিফাইনালে গেইল একাই ধ্বংসলীলা দেখিয়েছে। চার্লসের একার ইনিংসই একটা দলের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। তবে ম্যাককালাম যেভাবে খেলেছে, বড় রান করতে সুবিধা হয়েছে। মাঠে যে পরিমাণ শিশির ছিল, এই স্কোর না পেলে সমস্যা হয়ে যেত।’
বিদেশিরা যে খোলস ছেড়ে বের হবেন, বরাবরই এমন বিশ্বাস ছিল মাশরাফীর। যে কারণে একাদশে খুব বেশি পরিবর্তন আনা হয়নি। যেটি সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে বলে মনে করেন অধিনায়ক।
‘ফাইনালে আসার পেছনে আরেকটা জিনিস কাজ করেছে, আমরা টিমে খুব পরিবর্তন করিনি। হয়ত স্থানীয় দু’একটা জায়গায় পরিবর্তন এসেছে। সেটা প্রতিপক্ষ বুঝে বাঁহাতি স্পিনার খেলাব নাকি অফস্পিনার খেলাব সেই জায়গাটায়।’
এ ধরনের টুর্নামেন্টে যারা ধুঁকতে ধুঁকতে উপরের দিকে ওঠে, তাদেরকে ভয় করেন তামিম ইকবাল। সেই ভয়কে জয় করতে পারেননি কুমিল্লার অধিনায়ক। ম্যাচটা হেরেছেন ৩৬ রানে। ১৯২ তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শেষ বলে অলআউট ১৫৬ রানে। ম্যাচ হারের পর কুমিল্লার অধিনায়ক প্রশংসা করলেন রংপুরের দারুণ ব্যাটিং আর মাশরাফীর দূরদর্শী নেতৃত্বের।
‘তারা অনেক লড়াই করে এখানে এসেছে। যারা এভাবে এক রান, দুই রান বা এক উইকেট, দুই উইকেট নিয়ে উঠে আসে; আমি সব সময় সেই দলগুলোকে ভয় পাই। আমার মনে হয় যে এই টিমগুলোর সঙ্গে ভাগ্যটা সব সময় কাজে দেয়। এমনকি তাদের সুপারস্টাররা যেসব ম্যাচে পারফর্ম করল না, সেসব ম্যাচও তারা কোনভাবে জিতে নিয়েছে। এবং মাশরাফি ভাই যেভাবে লিড দিয়েছে, সুপারস্টার পারফর্ম না করলেও জিতিয়েছে। আসলে তাদের ক্রেডিট দিতেই হয়। এই নকআউট স্টেজে ওদের দুই সুপারস্টার বলতে গেলে একাই একপেশে করে ফেলেছে। শেষ ম্যাচে গেইল, আজ ব্রেন্ডন আর চার্লস। তারা যেভাবে খেলছে এটা ক্রিকেটের জন্য ভাল, বিপিএলের জন্য ভাল।’