বিচারের সর্বশেষ ধাপেও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা,
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সমন্বয়ে
গঠিত চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বদর প্রধান নিজামীর করা ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ এজলাসে আসেন আপিল বেঞ্চের সদস্যরা। এজলাসে বসেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ডিসমিসড’।
এখন শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার
সুযোগটুকুই পাবে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্বে থাকা নিজামী।
রিভিউ খারিজ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, রায় কার্যকরে কোনো বাধা নেই। তবে তিনি চাইলে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন।
ফাঁসির আদেশ বহাল থাকার খবরে সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান করা গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা উল্লাস প্রকাশ করে অানন্দ মিছিল বের করে। একই সঙ্গে দ্রুত ফাঁসি কার্যকরেরও দাবি জানান তারা।
মানবতাবিরোধী
অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিপক্ষে নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা
হয় গত ১৫ মার্চ। ওইদিনই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠানো হয়
কারাগারে। পরের দিন তা পড়ে শুনানো হয় কাশিমপুর কারাগারে থাকা নিজামীকে।
আইন
অনুযায়ী রিভিউ আবেদনের শেষ সময় ছিলো ৩০ মার্চ। তবে একদিন আগে করা ৭০
পৃষ্ঠার আবেদনে ৪৬টি কারণ দেখিয়ে নিজামীর পক্ষে রায় পুনর্বিবেচনা চাওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তা আংশিক মঞ্জুর করে এ বছরের ৬ জানুয়ারি ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত।
আড়াই মাস পর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৫৩ পাতার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়, যেখানে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন অভিযোগে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার কারণ ব্যাখ্যা করেন আপিল বিভাগ।
যে তিন অভিযোগে ফাঁসি
১. স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে একাত্তুরের ১০ মে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিঘ্রই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে বলে জানান নিজামী। সভার পরিকল্পনানুযায়ী ১৪ মে ভোড় ৬টা দিকে বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের সাড়ে চারশো মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে এবং প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে সেনা ও রাজাকাররা।
২. পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নিজামীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর ডা. আব্দুল আউয়াল ও অন্যান্য বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী-পুরুষ-শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজকার বাহিনী।
৩. বাংলাদেশের বিজয়ের প্রাক্কালে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে পাকিস্তানের দোসর আলবদর বাহিনী। ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে যার দায় নিজামীর।