কুষ্টিয়ার লালনশাহ সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী-রংপুর বিভাগের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে চার লেনের সড়ক নির্মাণসহ ১৭ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক সভা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরে এনইসিতে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।
সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। চার লেন নির্মাণের জন্য ৩০২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা।
এর ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে বরিশালগামী বা কুয়াকাটাগামী যে কোনো যানবাহনের মাধ্যমে লালনশাহ সেতু হয়ে কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ভাঙা হয়ে বরিশাল যাওয়া যাবে। পদ্মাসেতুর জন্য প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমানে রাজশাহী মহানগরের পানি সরবরাহের কাভারেজ ৭১ শতাংশ এবং রাজশাহী ওয়াসা মোট পানি উৎপাদনে ৯৬ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে অস্বাভাবিক হারে পানি উত্তোলনের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থিতিতল প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর বিরূপ প্রভাব তৈরি হচ্ছে। তাই রাজশাহী মহানগরীর পানির কভারেজ ৭১ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করতে চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় জি-টু-জি ভিত্তিতে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণের জন্য চার হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে মোট ১৯টি প্রকল্প উত্থাপন করা হলেও অনুমোদন দেয়া হয় ১৭টির। এসব প্রকল্পে ব্যয় হবে আনুমানিক ১৪ হাজার ২০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১১ হাজার ১৯৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে আসবে। এ ছাড়া দুই হাজার ৮১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি ১৯৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে পাওয়া যাবে।
এর আগে, চলতি সপ্তাহেই মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) একনেকের বৈঠকে আরও ২০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবারের একনেক বৈঠকের একদিন পরই বৃহস্পতিবার আরেকটি একনেক বৈঠক আয়োজনের কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এর কারণ দু’টি। প্রথমত, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে ১৮ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ কম হচ্ছে। তাই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১৪টি মঙ্গলবার পাওয়া গেছে। কিন্তু আজকেরটি নিয়ে ১০টি একনেক হচ্ছে। সরকারি ছুটি ও প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় বাকি চারটি একনেক বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। তাই আজকের এই বৈঠককে বাড়তি একনেক বৈঠক বলা যায় না।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস নির্মাণ, বৈরাগীপুল (বরিশাল)-টুমচর-বাউফল (পটুয়াখালী) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করা, ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য নন্দিগ্রাম (ওমরপুর)–তালোর-দুপচাঁচিয়া-জিয়ানগর–আক্কেলপুর গোপীনাথপুর জেলা মহাসড়ক এবং নন্দীগ্রাম (কাথম) কালিগঞ্জ-রাণীনগর জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করার প্রকল্প।
এছাড়া, যশোর অঞ্চল গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স (বর্তমান বাপার্ড), কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জের সম্প্রসারণ, সংস্কার ও আধুনিকায়ন, পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প, বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলায় যমুনেশ্বরী, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণ ও নদী পুনঃখনন, উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, দ্য প্রজেক্ট ফর দ্য ইমপ্রুভমেন্ট অব রিসোর্স ক্যাপাসিটিজ ইন দ্যা কোস্টাল অ্যান্ড ইনল্যান্ড ওয়াটারস প্রকল্প এবং সার সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রাম জোন প্রকল্প ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।