সিরিজ ড্র, তিন ম্যাচের একটি বৃষ্টির পেটে! পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলালে পাল্লা সমানে সমানই হতে পারতো। শেষে হারা ম্যাচে দারুণ এক ফিফটি করে প্রাপ্তির পাল্লাটা কী দারুণভাবেই না বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে দিলেন। ঝুঁকে দেওয়া সেই ওজনের নাম মিরাজ। অপার সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করা এই তরুণ বোলিংয়ে নির্ভরতা দিয়েছেন, বাকি ছিল ব্যাটিংটা মেলে ধরার। শুরু হয়ে গেছে সেটিও। টেস্টের পর ওয়ানডেতেও জাত চিনিয়ে জানান দিলেন, সুযোগটা তার প্রাপ্যই ছিল।
আসলে সুযোগটা প্রাপ্যই ছিল মিরাজের। ম্যানেজমেন্ট নাসির হোসেনকে চাচ্ছে না। তার মত অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন খেলছেন অজুহাতে। কিন্তু মিরাজ যেখানে ব্যাটে-বলে পরীক্ষায় উতরে যাচ্ছেন, সেখানে অচল পয়সা শুভাগত হোমদের পেছনে কেন ছোটা? সেই প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না।
জানা ছিল না বলেই মিরাজ টেস্ট সিরিজ খেলে দেশে ফেরত এলেন। যোগ দিলেন ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব পর্যায়ের ইমার্জিং দলে। এরপর এক ভোরে শ্রীলঙ্কা থেকে ডাক মিলল। মিরাজ হাজির ডাম্বুলায়। পরে খেলে ফেললেন তিনটি ওয়ানডেই। অভিষেকে বোলিংটা খুব একটা খারাপ হলো না। শনিবার জানালেন, লোয়ার অর্ডারে পাকা অলরাউন্ডারের ঘাটতিটা পূরণ করতে তিনি প্রস্তুতই। মিরাজের মনের কথা অনুকরণ করে বললে, পড়ে পাওয়া সুযোগটায় সেটা জানিয়ে রাখলাম!
পড়ে পাওয়া কথাটি আসছে ওই আগের প্রসঙ্গ থেকেই। তার ওয়ানডে সিরিজে খেলারই কথা ছিল না। খেললেন। এক ফাঁকে বোর্ড সভাপতি জানিয়ে দিলেন, মিরাজকে তো আমিই দলে নিতে বলেছি। এ সুযোগ পড়ে পাওয়া নয়তো কি! আগামীর তারকাকে স্বাগতম জানানোর কি শ্রী!
অথচ সম্ভাবনার ঝাঁপিটা খুলে বসেছিলেন ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই। লাল-সবুজের যুবাদের নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠেছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। পরে জাতীয় দলে আসি আসি করার ইতি ঘটল ইংল্যান্ড টেস্ট খেলতে আসলে। খেললেন। অভিষেকের দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে ইংলিশদের বোকা বানালেন। ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে দারুণ এক ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়ে জানান দিলেন, এসেছি!
সেই আসাটায় সম্ভাবনা ছিল। তৃপ্তি ছিল। ছিল প্রশান্তি-নির্ভরতা। আর খানিকটা খচখচানি! যে মিরাজকে স্বাগতম জানাতে প্রস্তুত লাল-সবুজের জার্সি, সেই মিরাজের দেখাই যে মিলছিল না। মিলবে কি করে! ব্যাট হাতে মিরাজ এমনভাবে আউট হতে থাকলেন যে, দেশি ধারাভাষ্যকারদের বারবার মনে করিয়ে দিতে হলো- ও’তো জাত অলরাউন্ডার, টেল এন্ডার নয়! আর ক্রীড়া লেখকদের শব্দের পর শব্দ খরচ করতে হলো এই বলে- ওকে একটু সময় তো দিতে হবে!
সেই সময়ের অপেক্ষাটা বেশি দীর্ঘ করলেন না মিরাজ। ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্টে এসেই দেখা পেলেন প্রথম ফিফটির, ৫১! সাদা পোশাকে পরের ইনিংসগুলো ২৩, ৪১, ২৮, ২৪, ২* জানান দিচ্ছিল ট্রেনটা লাইনেই আছে। এরপর শনিবার কলম্বোর সিংহলিজে।
দল ধুঁকছে। জয়ের জন্য লড়ে লাভ নেই! পরাজয় অবধারিত। কিন্তু ১৯ বর্ষী তরুণ মাথার দারুণ পরিস্থিতি সামলানোর ঝলক তখনই বেরিয়ে এল সবকটি ডানা মেলে। মিরাজ খেললেন। অভিষেকের তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে ব্যাটিং পেলেন। ধীরে দীরে শিল্পী হয়ে উঠলেন বাইশ গজে। যখন ফিরলেন, নামের পাশে টেস্টের সর্বোচ্চ ইনিংসটার সমান ৫১! ৭১ বলে ৬ চারে সাজানো। সংখ্যাগুলো বোঝাতে পারবে না কী পরিস্থিতিতে কী গোছানো এক ইনিংস দিয়েছেন মিরাজ। সঙ্গে তিন ম্যাচে ৪ উইকেট।
যদিও জয়ের হাসিতে মাঠ ছাড়া হয়নি মিরাজের। সেটাই আবার মুদ্রার উল্টো পিঠটার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। তার এমন অনেক ইনিংসে বাংলাদেশ হয়তো মুদ্রার সেই উল্টো পিঠটাও দেখতে শুরু করবে আগামীতে। তাতে পাল্লা ভারী হতে থাকবে জয়ের। যে পাল্লার ওজনের নাম মিরাজ। অথবা মিরাজরা।
লেখাটি শেষ করতে করতেই খবর এলো প্রথমবারের মত টাইগার টি-টুয়েন্টি স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন মিরাজ। লঙ্কা সফরে টি-টুয়েন্টি ম্যাচ দুটি হবে ৪ ও ৬ এপ্রিল।