দ্য এনভাইরনমেন্টাল ইনভেশটিগেশন এজেন্সি’র (ইআইএ) একটি প্রতিবেদনে প্লাস্টিক দূষণ জলবায়ু পরিবর্তনের মতই হুমকিস্বরূপ দাবি করে, এবং এর ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে জাতিসংঘের একটি শক্তিশালী চুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে।
প্রতিবেদনের বরাতে বিবিসি জানায়, প্লাস্টিক থেকে দূষণ বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা সৃষ্টি করেছে এবং প্লাস্টিক থেকে ক্ষতির যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তাই প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের সমগ্র দেশকে জাতিসংঘের একটি চুক্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, আমরা যে বায়ু থেকে শ্বাস নেই, তাতে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা বিদ্যমান, আর্কটিক তুষারেও রয়েছে প্লাস্টিক, এছাড়া আমাদের মাটি এবং যে খাবার খাই তাতেও প্লাস্টিক কণা মিশে আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, থাইল্যান্ডে ২০টি হাতি আবর্জনার স্তুপ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে মারা যায়।
তাই প্রতিবেদনের লেখকেরা জাতিসংঘের আওতায় প্লাস্টিক উৎপাদন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হ্রাসকরণে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বিশ্বের সব দেশকে একটি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানায়।
যদি দূষণের এই মাত্রা অব্যাহত থাকে তবে ২০৪০ সাল নাগাদ সমুদ্রে ভাসমান এসব প্লাস্টিকের ওজন সমুদ্রে থাকা মাছের সমষ্টিগত ওজনকেও ছাড়িয়ে যাবে।
জাতিসংঘ তিনটি অস্তিত্বগত হুমকি চিহ্নিত করেছে। যা হলো- জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং দূষণ।
বেশকিছু দেশ প্লাস্টিক চুক্তির বিষয়ে বিরোধিতা করেছে। তবে যুক্তরাজ্যসহ প্রায় শতাধিক দেশ ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের পরবর্তী পরিবেশ সম্মেলনে এই চুক্তির পক্ষে মতামত জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিরোধিতাকারীদের সংখ্যা খুব কম। তাই এই চুক্তি আইনানুগ বাধ্যবাধকতা বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে বিরোধ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন: তিনি এখন আগের পরিবেশ চুক্তিকে সমর্থন করেন যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিহত করেছিলো। যদিও বাইডেন সন্দিহান কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত তার পক্ষে যাবে কি না। কারণ তেল এবং গ্যাস থেকেই সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক তৈরি হয় এবং যার দুটোই যুক্তরাষ্ট্র বেশি উৎপাদন করে।
অন্যদিকে চীন, আরব আমিরাতের মতো রাষ্ট্রগুলো এই চুক্তির বিষয়ে নীরব রয়েছে। যদিও চীন সবচেয়ে বেশি ভার্জিন প্লাস্টিক উৎপাদন করে থাকে। ইআইএ প্রতিবেদক টম গ্যামেজ বলেন, প্লাস্টিক দূষণের দৃশ্যমান অংশটুকু ব্যাপক জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব বেশিরভাগই অদৃশ্য।
প্লাইমথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড থম্পসন জানান, জাতিসংঘের একটা চুক্তিতে প্লাস্টিকের সম্পূর্ণ জীবনচক্র নিয়ে বিশ্লেষণে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, এই সমস্যার কারণ প্লাস্টিক উৎপাদন এবং ভোগের অস্থিতিশীল মাত্রার উপর নির্ভরশীল। নরওয়েজিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হান্স পিটার আর্প বলেন, প্লাস্টিক দূষণ বিশ্ব হুমকির তিনটি সীমানাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করেন তিনি এবং তার এক সহকর্মী। যা হলো- ১ এক্সপোজার বৃদ্ধি; ২ বৈশ্বিক ইকোসিস্টেমে অপরিবর্তিত উপস্থিতি এবং ৩. ইকোলজিকাল হুমকি বৃদ্ধি এবং যা প্লাস্টিক নির্গমনের সাথে সাথে আরও বৃদ্ধি পাবে।