রাশিয়া উইক্রেন যুদ্ধ ও পূর্ববতী করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন চরম সংকটে পড়েছে। দেশে দেশে জ্বালানিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতি চরমে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে চরমমাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করায় বিশ্বব্যাপী চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। খোদ নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে গাড়ি ব্যবহার সীমিত করেছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো পড়েছে চরম সংকটে। বৈদেশিক রিজার্ভ ফুরিয়ে আসছে সবার। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার ঘটনাও বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকটে সৃষ্ট হয়েছে। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও আমদানি ব্যয় কমানো ও বৈদেশিক রিজার্ভ যাতে অকারণে নষ্ট না হয় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সরকারের জন্য জরুরি ছিল। সরকার ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে একটি পরিপত্র জারি হয়েছে।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার এই পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে বলা হয়েছে: করোনা–পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষাসফর, এপিএ এবং ইনোভেশনের আওতামুক্ত ভ্রমণ ও ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। এ আদেশ উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অবিলম্বে আদেশটি কার্যকর হবে।
বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন: সময় যখন কঠিন, তখন সিদ্ধান্তও কঠিন নিতে হয়। সারা বিশ্বের পরিস্থিতি এখন একরকম না। আমাদের বিশ্বের সঙ্গে একীভূত হয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যত দিন বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা চূড়ান্তভাবে সুরাহা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত আসতে হতে পারে। কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার অর্থ এই নয় যে দেশের অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাবে, উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ঘাটতি আসবে—সে রকম কিছু নয়। স্বাভাবিকভাবে আমরা বিলাসপণ্য দুই মাস পর কিনতে পারি। তিন–ছয় মাস পরও কিনতে পারি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বিলাসী পণ্য কিছুদিনের জন্য নয়। নিত্যপণ্যে কোনো হাত দেব না।
আমরা আশা করি অর্থমন্ত্রীর কথাগুলো যেন বাস্তবে প্রয়োগ হয় এবং এগুলোর কার্যকর হয়। কারণ এই চরম বৈশ্বিক দুরবস্থার সময় আমাদেরও সময় এসেছে কৃচ্ছতা সাধনের। বিশেষ করে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয়, কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বিলাস দ্রব্য আমদানিতে বিধিনিষেধ জরুরি ছিল। সরকার করোনা মোকাবেলার মত এই বৈশ্বিক সংকটও যেন নিজের মত করে মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পারে আমরা এটাই প্রত্যাশা করি।