মিয়ানমারের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি নির্বাচন কর্মকর্তারা। কয়েক দশক ধরা সামরিক শাসনের বেড়াজাল ভেঙ্গে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের এই জয়ে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফলে সংসদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষমতা লাভ করবে এনএলডি।
এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ৮০ শতাংশ আসনের ফলাফলে এনএলডি তার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন লাভ করেছে। তবে সামরিক বাহিনীর হাতে এক-চথুর্তাংশ আসন থাকায় সরকার পরিচালনায় তাদেরও ব্যাপক প্রভাব থাকবে।
পাঁচ বছর আগে ব্যাপক সমালোচিত নির্বাচনে জয় লাভ করা সেনাবাহিনী সমর্থিত ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন সলিডারিটি পার্টি (ইউএসডিপি) এই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ শতাংশ আসন লাভ করেছে।
দেশটির তিন কোটি ভোটারের মধ্যে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের এই নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে এক হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। মিয়ানমারের পার্লামেন্টের দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট ৬৬৪টি আসন। এরমধ্যে ১৬৬টি সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে এনএলডিকে পেতে হতো ৩৩০টি আসন।
মিয়ানমারের (পূর্বে যা বার্মা নামে পরিচিত ছিলো) ইতিহাসে ২৫ বছরের মধ্যে গত রবিবার অনুষ্ঠিত প্রথম এই উন্মুক্ত নির্বাচনে এনএলডির অভাবিত জয়ের পরেও সংবিধান মোতাবেক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কয়েক দশক গৃহবন্দী থাকা শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি।
দেশটির সংবিধান অনুযায়ী যে ব্যক্তির সন্তান জন্মসূত্রে বিদেশী নাগরিক তারা প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সামরিক বাহিনীর শাসনামলে বন্দীত্ব বরণ করা সু চির দুই পুত্র সন্তানই জন্মসূত্রে যুক্তরাজ্যের নাগরিক। তবে সু চি বরাবরেই জোরের সাথে বলে আসছেন তার দল নির্বাচনে জয়ী হলে নেতৃত্বের আসনে তিনিই থাকবেন।
মিয়ানমারের ঐতিহাসিক নির্বাচনটি ব্যাপক পরিসরে স্বচ্ছ এবং ন্যায্য বলে বিবেচিত হলেও কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশের নাগরিক বলেই স্বীকৃত নয় সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিসহ লাখ লাখ মানুষ নির্বাচনে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।
সু চির বিজয়ে আশার আলো দেখছেন দেশটির ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। সু চির নেতৃত্বে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় বৈষম্যের শেষ হবে বলে মনে করছেন তারা।