প্যারিসের নির্মম সন্ত্রাসী হামলার চারদিন পর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ‘ওয়েম্বলি’ স্টেডিয়ামে এক প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ফুটবল দল। এই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের হিসেব ছাড়িয়ে ফরাসি জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে ওয়েম্বলিসহ পুরো ইংল্যান্ডই সাজবে ফরাসি রঙে।
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় স্পেন ও বেলজিয়ামের মধ্যকার হাইপ্রোফাইল প্রীতি ম্যাচ বাতিল করা হলেও বিশ্বকে একত্রিত করার মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে ইংল্যান্ড-ফ্রান্স ম্যাচ চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ভয়াবহ ওই হামলার রাতে যখন ম্যাচটি শুরু হবে ওয়েম্বলি তখন মলিন ও বিষণ্ণ থাকবে বলেই ধারণা সবার। তবে এই মলিন ও বিষণ্ণতার ভেতরেই থাকবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার, সন্ত্রাসকে পরাজিত করার এবং বিশ্বকে একত্রিত করার মন্ত্র।
প্যারিসের ঘটনার পর এই প্রীতি ম্যাচ বাতিল করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিলো। ইংল্যান্ডের দিক থেকে ম্যাচ বাতিলে আবেদন জানিয়ে বার্তা দেয়া দেয়া হয়েছিলো ফ্রান্সকে। কিন্তু বাতিল না করে সামনে এগিয়ে যাওয়া প্রত্যয়ে ম্যাচ খেলার পক্ষে মত দেন ফরাসিরা।
কোচ দিদিয়ের দেশম আলোচনার পর দলের খেলোয়াড়দের সামনে ম্যাচ খেলা না খেলার দুটি বিকল্পই রাখেন। তবে প্রত্যেক খেলোয়াড়ই ম্যাচ খেলার পক্ষে মত দেন।
প্রীতি ম্যাচ দেখতে এবং ফ্রান্সের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে ওয়েম্বলিতে আজ উপস্থিত থাকবেন ৯০ হাজার সমর্থক। ফরাসি জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি জানাতে মাঠে উপস্থিত থাকবেন রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়ামও।
প্যারিসে হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে বিভিন্ন স্থাপনার সঙ্গে স্তাদে ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামও ছিলো। হামলার সময় ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যকার প্রীতি ম্যাচ চলছিলো। তখন বিস্ফোরণে স্টেডিয়ামের বাইরে তিন নিহত হয়। প্যারিসের ঘটনার পর একই রকম হামলার আশঙ্কায় ইংল্যান্ড-ফ্রান্স ম্যাচে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
লন্ডন শহর ও ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামসহ এর আশেপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি রাখা হয়েছে আর্ম ফোর্সেস বাহিনী। নিরাপত্তা জোরদার করতে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। শুধু লন্ডন শহরই নয়, আশেপাশের পর্যটন এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত আর্ম ফোর্সেস বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এই বাহিনীকে দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত ক্ষমতা। কোনো বন্দুকধারীকে দেখামাত্র কালবিলম্ব না করে দেয়া হয়েছে গুলি করার নির্দেশ। নিরাপত্তায় আরো থাকবে ডগ স্কোয়াড বাহিনী।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর টেরি বলেছেন, যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া দরকার আমরা তা নিয়েছি। এই ম্যাচকে সামনে রেখে নির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। তবে দর্শকদের চোখ-কান খোল রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উদ্বেগজনক কোনো কিছু দেখা মাত্র পুলিশকে ডাকতে বলা হয়েছে।
টেরি বলেন, লন্ডন ও ফ্রান্স দুই বোনের মতো শহর। দুটি শহরই অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং গতিশীল। এরকম দুটি শহর কখনোই সন্ত্রাসবাদের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দর্শকদের যথাসম্ভব আগে মাঠে উপস্থিত হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। মাঠে কোনো রকম ব্যাগ না আনারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যেকোনো সময়ের চেয়ে তল্লাশি পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। অন্য সময় মাঠে গিয়ে টিকিট কেনা গেলেও এই ম্যাচে সেটা পারছেন না দর্শকরা। এ জন্য দর্শকদের আগেই টিকিট সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
ওয়েম্বলিতে খেলবে প্যারিস হামলার সরাসরি ভুক্তভোগী দুই ফরাসি তারকা লাস দিয়ারা ও অ্যান্থনিও গ্রিজম্যান। হামলায় দিয়ারার এক কাজিন নিহত ও গ্রিজম্যানের বোন কোনো রকমে বেঁচে গেছেন।
এই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের হিসেব অনেক বড় কিছু না হলেও দুই রকম অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠে নামবে দুই দল। প্যারিস হামলার দিন প্রীতি ম্যাচে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ফ্রান্স। আর একই দিনে স্পেনের কাছে একই ব্যবধানে হারে ইংল্যান্ড। এছাড়া সর্বশেষ মুখোমুখিতেও এগিয়ে আছে ফরাসিরাই। শেষ ছয় ম্যাচের চারটিতে জিতেছে ফ্রান্স। ইংলিশদের জয়শূন্য রেখে বাকি দুই ম্যাচের সমাপ্তি ঘটে ড্রতে।
ম্যাচ শুরু আগে প্যারিস হামলা স্মরণে যা যা করা হবে:
# ফরাসি জাতীয় সংগীতকে সম্মান জানাতে ইংল্যান্ডের দর্শকরাও একই সঙ্গে ‘লা মার্সিলেইস’ গাইবেন। এই লেখাটি মাঠে পর্দায়ও দেখানো হবে।
# প্রোটেকল ঠিক রাখতে ‘লা মার্সিলেইস’ গাওয়া হবে ‘ঈশ্বর রানীকে রক্ষা করুন’ গাওয়ার পর।
# ফ্রান্সের জাতীয় সংগীতের সময় ইংল্যান্ডসহ সব দর্শক আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াবেন।
#খেলা শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে।
# দুই দলই খেলা চলাকালে কালো আর্মব্যান্ড ব্যবহার করবেন।
এই ম্যাচের সময় ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ফরাসি পতাকার রঙে লাইটের ব্যবস্থা করেছে ইংল্যান্ড ফুটবল সংস্থা এফএ। সাদা-নীল-লাল এই তিনটি রঙ ফ্রান্সের বিখ্যাত তিন শব্দ সাম্য-স্বাধীনতা-ভ্রাতৃত্ব প্রতীক বহন করে।