প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার বিষয়ে নতুন কিছু ভাবার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত ২৩তম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরীক্ষা নিতে নিতে শেষ করে দিচ্ছি বাচ্চাদের। খালি পরীক্ষা আর পরীক্ষা। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যে পিইসি পরীক্ষা নেয়া হয়, এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। তিনিও (প্রধানমন্ত্রী) এর সঙ্গে একমত।’
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, ‘পিইসি পরীক্ষা থাকবে কি-না, তা পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বাচ্চাদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অনেক মন্তব্য করেছেন, আলোচনা করেছেন। (বাচ্চারা) অনেক বেশি বই কাঁধে নিয়ে ঘোরে, কষ্ট হয়। আজকেও বিষয়টি বলেছেন। পরীক্ষা নিতে নিতে শেষ করে দিচ্ছি বাচ্চাদের। খালি পরীক্ষা, খালি পরীক্ষা। উনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেন, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।’
‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আরও নতুন নতুন চিন্তাভাবনা করার জন্য। মূল কথা হলো-শিশুদেরকে এই ভার থেকে মুক্ত করতে হবে। তারা যেন খেলাধুলা করতে পারে। শিশুদের বইয়ের ভার কমাও, আনন্দে থাকতে দাও ইত্যাদি।’
তিনি বলেন, বিষয়টি (পিইসি পরীক্ষা থাকবে কি-না) নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও বিভক্ত। কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন ভালো, কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন ভালো নয়। এটা আন্ডার রিভিউ (পর্যবেক্ষণে রয়েছে)।
চামড়া শিল্প সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, হাজারীবাগে যখন সব চামড়ার কারখানা ছিল, তাদের পাশে কিছু লোক ছিল যারা ট্যানারির মালিক না। তারা হাড়-গোড় দিয়ে বাই-প্রোডাক্ট শিল্প বানাত। প্রধানমন্ত্রী বললেন, তারা সাভারে গেছে, সেখানেও তো এটা হবে। তাদের জন্যও তো ব্যবস্থা করা উচিত, তারা যদি ওখানে গিয়ে বাই-প্রোডাক্ট শিল্প গড়তে চায়।
তিনি বলেন, ‘বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন) কর্তৃপক্ষ, শিল্পমন্ত্রী, শিল্প সচিব জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে জায়গা চিহ্নিত করেছেন। যারা যেতে চায়, তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখা হবে। এটা নির্দেশ না, অনুরোধ ছিল। তারা এই কাজটা করবে। কারণ, এর ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।’
এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, চামড়া শিল্পনগরীর মেয়াদ বৃদ্ধিসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজেস্ব তহবিল থেকে ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা ২৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করবে।
এর মধ্যে ৩৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪০১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সিলেট সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা।
এছাড়া ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পে খরচ হবে ৬০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ঢাকা মহানগরীর ও পূর্বাচল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা।
মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসির জন্য অফিসার্স মেস ও বিওকিউ নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
এছাড়া চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর হাওড় এলাকার নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।