মঞ্চনাটকের পাণ্ডুলিপি হস্তান্তরের একটা ঘরোয়া নিয়ম আছে। নাট্যকার দলের সকল সদস্যের সামনে মেঝেতে বসে নিজে পুরো নাটকটি পড়ে শুনিয়ে দলপ্রধানের হাতে তুলে দেন, মিষ্টি খাওয়ানো হয়, এসব। প্রাঙ্গণে মোর নাটকের দলটি গত ১৫ বছর ধরে ডজনখানেক নাটক করেছে। কিন্তু এই দলের শীর্ষস্থানীয়রা এই সংস্কৃতি নিজের দলের জন্য একবারও প্রযোজ্য করতে পারেননি। কেন?
দলনেতা অনন্ত হীরা বললেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দলের বাইরের প্রায় সব নাট্যকারই মৃত। আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মোহিত চট্টোপাধায়, সৈয়দ শামসুল হক প্রমুখের নাটক করেছি, করছিও। কিন্তু পাণ্ডুলিপি হস্তান্তর বা নাট্যকারের মুখে প্রথম পাঠ শোনার সুযোগ হয়নি। ১৫ বছরের ইতিহাসে আজ প্রথম এটা হচ্ছে।’
গতকাল ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে প্রাঙ্গণে মোর দলের মগবাজারের অফিস কাম রিহার্সেল ঘরে এই পাণ্ডুলিপি হস্তান্তরের অনুষ্ঠান হলো। শাকুর মজিদ তার ‘হাছনজানের রাজা’ কাব্যনাট্যের পাণ্ডুলিপি প্রাঙ্গণে মোর দলের দলপ্রধান অনন্ত হীরার হাতে তুলে দেন।
এরপর শাকুর মজিদ বললেন, ‘শুনে ঘাবড়ে গেলাম। তারা জীবিত নাট্যকারের নাটক করে না! মানে কী আমাকে মনে মনে এখনই মেরে ফেলতে চায়?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পাঠে খুবই কাঁচা। কথা বলায় আরও নাদান। তারপরও প্রায় দেড় ঘণ্টা টানা পড়ে আমার দীর্ঘ গবেষণার ধন “হাছনজানের রাজা” কাব্যনাট্যখানি প্রাঙ্গণে মোর নাট্যদলের কাছে দিয়েছি। দেওয়ার সময় কাকুতিমাখা নরম স্বরে বললাম, ভাই হীরা, আমি কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা, আমার কন্যাটাকে তোমার হাতে দিয়া দিলাম। তার দোষত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে তুমি তাকে যতন করে লালন করো।’
জানালেন, নাটকটি যে কলম দিয়ে লিখেছিলেন, আর যে ফোল্ডারের মধ্যে হাতে লেখা লুজ শিটগুলো রেখেছিলেন, সেটা দিয়েছেন দলের অন্যতম সদস্য নুনা আফরোজকে। ‘হাছনজানের রাজা’র পর শাকুর মজিদ এখন ব্যস্ত ‘পিয়ারী’, ‘রাধার মন’ আর ‘সে রাজের দোলায়’ নিয়ে।