প্রকৃতির কালো থাবা পৃথিবীর ওপরে; কোথাও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, কোথাও দাবানল, কোথাও বন্যা, আবার কোথাও উচ্চ তাপমাত্রা। প্রকৃতির এসব রুদ্রমূর্তির কারণে দেশে দেশে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্যা মানুষ।
সোমবার গ্রিসের রাজধানী অ্যাথেন্সের কাছে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দাবানল। দাবানলে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ বলে জানিয়েছে রেডক্রস। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ দাবানলকে গত ১০ বছরেরও বেশি সময়ের সবচেয়ে বড় দাবানল বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
রেডক্রস জানিয়েছে, বিপর্যয়ের কেন্দ্র সমুদ্র তীরবর্তী গ্রাম মাটি। সেখানে শুধু একটি বাগানবাড়ির উঠান থেকেই মঙ্গলবার ২৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই মর্মান্তিক আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছিল ২৪।
জরুরি উদ্ধারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন স্থানে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে হেলিকপ্টার ও নৌকার সাহায্যে একটি সমুদ্র সৈকতে থাকা বহু লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
দাবানলটি বাতাসের তীব্র গতির কারণে রাজধানীর পাশের বনে ছড়িয়ে পড়েছে। পুরো এলাকায় জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে গ্রিস।
গ্রিসে যখন ভয়াবহ দাবানলের ছোবল, তখন ভয়াবহ তাপদাহে ভুগছে জাপান। এই তাপদাহে এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৪০ জন। নিরাপদ থাকতে নতুন করে সবার জন্য সতর্কতা জারি করেছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
সোমবার টোকিওর পাশে কুমাগায়াতে তাপমাত্রা ছিলো ৪১.১ সেলসিয়াস। এর আগে জাপানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিলো ৪১ সেলসিয়াস, ২০১৩ সালে।
সোমবার জাপানের কয়েক ডজন শহরে তাপমাত্রা ছিলো ৪০ সেলসিয়াস। জাপানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এজেন্সি জনগণকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে, প্রচুর পানি পান করতে বলেছেন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে বলেছেন।
৩৫ ডিগ্রির উপরে যেখানে তাপমাত্রা সেখানে হিটস্ট্রোক থেকে রেহাই পেতে আরো বেশি সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। তবে এর থেকে কম তাপমাত্রাও শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তারা কোন পরিবেশে কী কাজ করছে সেটার ভিত্তিতে।
দেশটির কিয়োডো নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এই গ্রীষ্মে এরই মধ্যে ১০ হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তাপের কবলে পড়ে।
টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকি বলেছেন, এখনকার তাপদাহ অনেকটাই স্টিম বাথ রুমে থাকার মতো।
এদিকে ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভাসছে লাওসের মানুষ। বন্যার বন্যার পানির স্রোতে নির্মাণাধীন একটি বাঁধ ধসে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্যা মানুষ, নিখোঁজ রয়েছেন শত শত।
লাও নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, সোমবার বিকালে আত্তাপিউ প্রদেশের হাইড্রোইলেকট্রিক বাঁধটি ভেঙে ছয়টি গ্রামের ওপর দিয়ে পানির হঠাৎ স্রোত বয়ে যায়। এর ফলে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষ গ্রহহীন হয়ে পড়েছে।
ছবিতে দেখা গেছে, লোকজন ডুবন্ত বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছে। পরে নৌকায় করে তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
কয়েকদিন আগে প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণের কবলে পড়েচিল বাংলাদেশের মানুষও। তীব্র গরমে দেশবাসী ছিল নাকাল। তীব্র গরম কমলেও এখন শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ে ধস হতে পারে বলে সতর্কও করা হয়েছে।