চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত থাকবে ২০১৬

বছরের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশ আর ভারত কেঁপে উঠলো বড় ধরণের ভূমিকম্পে। কিন্তু এটাই শেষ নয়; আরো বড় বড় সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধেয়ে আসছে বিশ্ববাসীর দিকে, চলবে বছর জুড়ে।

এমনই পূর্বাভাস দিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, তীব্র শীত ও তুষারপাতসহ নানা ধরণের দুর্যোগ আঘাত হানবে এ বছর পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে।

ব্রিটেন আছে এর মধ্যে ভয়াবহ দুশ্চিন্তায়। দেশটিতে দু’একদিনের মধ্যেই এক মাসের সমান বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। এর সাথে থাকতে পারে বজ্রপাত ও তীব্র বায়ুপ্রবাহ। ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল ও স্কটল্যান্ডে চলছে একটানা ভারী ঝড়-বৃষ্টি। চলবে পুরো সপ্তাহ ধরে। ঝড়ের বেগ ৬০ মাইল প্রতি ঘণ্টা পর্যন্তও হতে পারে।

গত বছরের শেষ দিক থেকেই খারাপ আবহাওয়া চলছে দেশটিতে। ঝড়, বন্যা লেগেই আছে। টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সেই বন্যা প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ‘এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি’ দেশজুড়ে ১শ’টির বেশি বন্যা বিষয়ক সতর্কতা এবং ২২টি মারাত্মক বন্যা বিষয়ক সতর্কতা জারি করেছে।

অন্যদিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলে শীত বাড়তে যাচ্ছে। এতে এখনই সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে; তাপমাত্রা আরো কমে এ তুষারপাত তুষারঝড়ে পরিণত হবে এবং তুষারের স্তর ভারী হয়ে সপ্তাহের শেষ দিকে জনজীবনকে থমকে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু অঙ্গরাজ্য বন্যার পানিতে ডুবে আছে। বন্যা সতর্কতা জারি হয়েছে অনেকগুলোতে। ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত স্থানীয় নদীগুলোতে পানির উচ্চতা রেকর্ড সীমা অতিক্রম করেছে। সাথে রয়েছে প্রবল বৃষ্টি আর ঝড়।

নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যে তীব্র ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত। তবে অবস্থা আরো অনেক খারাপ হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টিপাত ২শ’ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

মিসৌরি ও ইলিনয়ে নদীর পানি নেমে গেলেও বন্যার পানি সরেনি। ইলিনয়ে বন্যার পানি ১৯৯৫ সালের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এসব এলাকা থেকে লাখখানেক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

পর পর কয়েকটি ঝড়ে অবস্থা বেশ খারাপ অস্ট্রেলিয়ার। এখনো চলছে প্রবল বৃষ্টিপাত। অতিবৃষ্টিতে বন্যা হয়েছে দেশটিতে। দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় বন্যার পানিতে তীব্র স্রোত। উচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে দেশজুড়ে।

তবে ভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে প্রাকৃতিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বৈচিত্র্যে ভরা দেশ গুয়েতেমালায়। দেশটির ফুয়েগো আগ্নেয়গিরি সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বিস্ফোরিত হয়ে আকাশে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত ছাই ছড়িয়ে দেয়। আশপাশের ৮টি শহরের আকাশ ঢেকে আছে সেই ছাইয়ের ঘন মেঘে।

গত সপ্তাহ থেকেই টানা অগ্নুৎপাত হচ্ছে ফুয়েগোতে। গত কয়েকদিন ধরে উদগীরণের মাত্রা বেড়েছে। দেশটিতে বিমান চলাচলে সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।

অগ্নুৎপাত হয়েছে সিসিলির পূর্ব উপকূলের মাউন্ট এটনাতেও। এটি ইউরোপের সর্বোচ্চ সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। গত দু’বছরে এই প্রথম ওই আগ্নেয়গিরির ভোরাজিন জ্বালামুখে অগ্নুৎপাত হলো। বিস্ফোরণে ধোঁয়া আর ছাইয়ে কালো হয়ে যায় পুরো আকাশ। ছাইয়ের মেঘে বজ্রঝড়েরও সৃষ্টি হয়।

সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী এল নিনো আবহাওয়া চক্রের (উচ্চ ও নিম্ন তাপমাত্রার বায়ুচক্র এবং এর ফলে বিষুবীয় অঞ্চলে সৃষ্ট পানিচক্র) প্রভাবে এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের এতো প্রকোপ।

মৌসুমের শুরুতেই এমন অবস্থায় শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা। বাকি সময়টাতে অবস্থা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তারা তা শুধু আন্দাজই করতে পারছেন।