সচিবালয়ের প্রায় সব উর্ধতন পদস শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন করা কি অন্যায্য ও অন্যায় না? ন্যায়ত: উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরই সচিব হবার সমান অধিকার থাকার কথা। কিন্ত প্রশাসনের কোটারি স্বার্থবাজরা অন্য ক্যাডারদের সচিবালয়ে প্রবেশের দ্বার প্রায় বন্ধ রেখেছে। এবং অন্যায় ও বৈষম্যমূলকভাবে অন্য সব ক্যাডারের বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি, ট্রেনিং, বেতনবৃদ্ধির ভাগ্যবিধাতা রূপে কাজ করে যাচ্ছে।
একজন আমলা একটা বড় সাইজের কেরানি মাত্র। অথচ যে কোন উচ্চমার্গের পেশাদারকেও তার কাছে সকম্পিত থাকতে হয়। সচিবালয়ে কোন আত্মীয় থাকলে বা সচিবালয়ের কাউকে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করা গেলে একজনের চলার পথ যতটা মসৃণ, তা না হলে তা ততটাই কঠিন। তাদের ভাবসাব, এটিচ্যুড, দেহভাষায় তাই ব্রাহ্মণ্যযভাবটা প্রবল।
এ বৈষম্য বড় বেশি বর্ণনবাদী। অন্য ক্যাডাররা যেন বা তাদের দাসানুদাস।
এবার আসি সিলেকশন গ্রেড বাতিল হওয়া সদ্য ঘোষিত পে-স্কেলে। সর্বোচ্চ গ্রেড ১ ও ২ শুধু আমলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এখানে অন্য যে কোন ক্যাডারের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। এরও উপরে সিনিয়র সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব নামে আরো দুটি স্কেল শুধু আমলাদের জন্য আগেই নির্ধারিত করা হয়েছে।
স্বাস্হ্য ক্যাডারের কথা যদি ধরি, এর অধ্যাপকরা গ্রেড-৩ অনুযায়ী বেতনভাতা ও সুবিধা পান। তবে সিলেকশন গ্রেড পেলে স্বাস্থ্য ক্যাডারের অধ্যাপকরা গ্রেড-২ তে উন্নীত হতে পারতেন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বাতিল হওয়ায় তাদের ‘গ্রেডে’র উন্নতি বন্ধ হয়ে গেছে।
গতবছর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩০টি শীর্ষ পদকে গ্রেড-১ এবং ২০টি পদকে গ্রেড-২ তে উন্নীত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রশাসনে গ্রেড-১ সচিব এবং গ্রেড-২ অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার পদ।
এখানে একটা চালাকি আছে। উদাহরণ হিসেবে ধরুন, নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাধ্যতামূলকভাবে গ্রেড-২ বা অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার পোষ্ট। গ্রেড-২ এর কোন অধ্যাপক ডাক্তার এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। নতুন পে-স্কেলে যেহেতু সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে গ্রেড উত্তরণের সুযোগ নাই তাই মেডিকেলের অধ্যাপকের জন্য গ্রেড-৩ ই শেষ ঠিকানা। কেয়ামত পর্যন্ত চাকরি করেও সে কোনদিনই গ্রেড-২ ছুঁতে পারবে না। শুধু বছরওয়ারি চক্রবৃদ্ধিহারের বেতনবৃ্দ্ধির মোয়া নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠবে স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে তা হলে কে বসবেন? উত্তর হলো যেহেতু মেডিকেল অধ্যাপকরা গ্রেড ৩ আর মহাপরিচালকের পদটি গ্রেড-২, সুতরাং সচিবালয় থেকে গ্রেড-২ মানের অতিরিক্ত সচিব আমদানি করা হবে। কৃষি, প্রকৌশলী ও অন্য সব সেক্টরেও একই কাহিনী। এখন যারা সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত সিনিয়র অধ্যাপক, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী আছেন তারা একে একে অবসরে যাবার পর নিজেদের দপ্তর অধিদপ্তরে আমলা ছাড়া আর কাউকে দিয়ে বড় পদগুলো পূরণ করার আর কোন পথ থাকবেনা।
খাই খাই চাই চাই স্বভাবের আমলাদের সবকিছু দখলের কি নিদারুণ প্লানিং ও ঠান্ডা মাথায় তার বাস্তবায়ন! শীর্ষ পদগুলোকে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ তে উন্নীত করা এবং একই সঙ্গে সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে অন্যদেরকে ১ বা ২ গ্রেডে উঠার দরজা বন্ধ করে দেয়া সেই দুরভিসন্ধি থেকেই করা।
সিলেকশন গ্রেডটা কার পাকা ধানে মই দিলো যে, আপামর কর্মচারীদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও অসন্তোষের মুখেও এটি বাদ দিতে কর্তৃক্ষকে এমন অনমনীয় অবস্হান নিতে হবে? জনমতের বিপক্ষে সিলেকশন গ্রেড বাদ দেবার ব্যাপারে এই আপোষহীন অবস্হান থেকেই এর পিছনের দুরভিসন্ধিটা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে।
আমলাদের কুটচালের কাছে সরকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারলো না অথবা বলা যায় অন্যসব ক্যাডারদের উপেক্ষা করে আমলাদের প্রতি নতজানুতার পরিচয় দিলো।
(প্রকাশিত এই মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই‘র সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)