বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল প্রশাসনের কারো ওপরই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা সম্পূর্ণভাবে সরকারের অধীনে কাজ করছে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
এবার লড়াই করে ভোট দিতে হবে মন্তব্য করে মওদুদ আহমদ বলেছেন, যেখানে সরকারি দল বাধা দেবে সেখানেই প্রতিরোধ করতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। ভোটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে।
এই নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অাদায় করতে হলে অান্দোলনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটি উচ্চারণ করাটাও ভুল। কিসের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড? এই সরকারের কাছ থেকে, এই কমিশনের কাছ থেকে তা আশা করছেন? যদি তা আদায় করতে হয় আন্দোলন করে করতে হবে। অন্যথায় হবে না। এখন মূল লক্ষ্য ভোট নিশ্চিত করা। মানুষ যেন ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার ভোট আমি দিব, লড়াই করে ভোট দিব।’
দলীয় সরকার নিজেদের মতো করে ভোট করতে চায় দাবি করে মওদুদ বলেন, ‘আমরা এতদিন বলে এসেছি, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়। দলীয় সরকার থাকলে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। আজকে সেই শংকা ও ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার জানে মাঠে তাদের ভোট নেই। জনগণ ভোট দেবে না। তাই নির্বাচন যেন না হয় সে কলাকৌশল গ্রহণ করছে। আমাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করছে, মামলা দিচ্ছে। গত দু’দিনে ৩ জন প্রার্থীকে জেলে নেয়া হয়েছে। আরো বাড়বে। বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চলছে। কিন্তু তাতে কাজ হবে না। বিএনপি সহ ঐক্যফ্রন্ট যেদিন নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে সেদিন থেকে মানুষ আশা পেয়েছে। সারা দেশে ধানের শীষের জোয়ার উঠেছে। এই জোয়ার থামাতে পারবে না। যদি ভোট হয় এই সরকারের নিশ্চিত পতন হবে।’
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি চাইলে দুই আসনে প্রার্থী হতে পারতাম। কিন্তু আমি হইনি। আমি শুধু একটিতেই প্রার্থী হচ্ছি। আমার নোয়াখালীতে আমি আমার এলাকায় নির্বাচন করব। আমি লড়াই করবে। আমি একে বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এর আগে আমি বর্তমান মন্ত্রীকে (ওবায়দুল কাদের) ৫ বার পরাজিত করেছি। বিপুল ভোটে পরাজিত করেছি।’
‘যতই সরকার কলাকৌশল করুক না কেন, ভোটারেরা যদি ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে এই সরকারের অবশ্যই পতন হবে’- বলেন মওদুদ।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরো বলেন, ‘এ কারণে ভোটারদের মধ্য থেকে ভয় ভীতি দূর করতে হবে। এটি আমাদের বিরাট সংগ্রাম, আমাদের বিরাট পরীক্ষা। দেশের জন্য, মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এটি শেষ পরীক্ষা। আর কোনোদিন এমন সুযোগ আসবে কিনা আমার জানা নাই। এই সরকারকে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে পরাজিত করার এটাই শেষ সুযোগ। এই সরকারের সকল অপকর্মের জবাব দিতে হবে ভোটের মাধ্যমে।’
সেমিনারে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশে কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। নির্লজ্জ প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনও নির্লজ্জ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সরকারের তল্পিবাহক। স্বৈরাচার সরকার নিজেদের জায়েজ করতে এ ধরনের নির্বাচনের খেলার ব্যবস্থা করেছে। লড়াই ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘বগুড়ায় আওয়ামী লীগের লোকজনই আমাকে সমর্থন দেবে। এই নির্বাচন লড়াই। দশ কোটি ভোটারের লড়াই। লড়াইয়ে হারবার সুযোগ নেই।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করেন, সরকার আইনের অপপ্রয়োগ করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মাঠে থাকতে হবে। এভাবে সরকার চলতে পারবে না।
এ সময় তিনি মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিএনপি পুরনোদের ওপর ভর করেছে মন্তব্য করে বলেন, ‘নমিনেশন চুড়ান্ত করার সময় নবীনদের বিবেচনায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সেমিনারের আয়োজক আদর্শ নাগরিক আন্দোলন ও জাতীয় মানবাধিকার আন্দোলন নামক দু’টি সংগঠন।