চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী

চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন: অর্থনীতির সব সূচক এখন উর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। নেতিবাচক কিছু দেখছি না। পাশাপাশি বেসরকারিখাতে বিনিয়োগের যে মন্দাভাব ছিল, সেটা কেটে যাচ্ছে। তাই এবছর প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে বলে দৃঢ় আশা আমার।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮ শতাংশের মত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব বলে বুধবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ মন্তব্য করার প্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী আজ এসব কথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে সুষ্ঠুভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার ধারাবাহিকতার ওপর এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন নির্ভর করছে।

তিনি বলেন: আমরা মনে করি জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড কোন দিক থেকে ব্যাহত হচ্ছে না। এছাড়া আমাদের কিছু মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হয়েছে। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের কিছু দেখছি না। তাই আমরা আশা করছি, এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে।

তিনি মনে করেন, দেশের অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। কেননা বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশকে ভিত্তি ধরলে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ভাল অবস্থায় রয়েছে বলে এডিবির পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন: অর্থনীতির বর্তমান শক্ত অবস্থানের প্রেক্ষিতে বেসরকারিখাতে বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়ছে। সরকারি বিনিয়োগ অব্যশই উল্লেখ করার মত। এ কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এমন পর্যবেক্ষণ করছে।

বর্তমানে বিনিয়োগ-জিডিপির অনুপাত ৩২ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে বিনিয়োগবান্ধব অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আশা করছি আগামী দিনগুলোতে এই বিনিয়োগ অনুপাত আরো বাড়বে।

তিনি আরও বলেন: বাংলাদেশে জাপানী বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে। ২০০৯ সালে যেখানে মাত্র ৮২টি জাপানি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ছিল, এখন জাপানি প্রতিষ্ঠানের সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৯।

দেশের দুইজন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ উচ্চহারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি এখন অনেক ভাল অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (ফাইল ফটো)

বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত অবস্থায় আছে উল্লেখ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, আমাদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, এগুলো ভালভাবে কাজে লাগাতে পারলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমাদের অর্থনীতির সেই সক্ষমতাও রয়েছে।

তবে তিনি মনে করেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত হলো-সেই বিতর্কে না গিয়ে অর্থনীতি ভাল অবস্থায় আছে কি-না এটাই বড় বিষয়। আমরা সেই জায়গায় ভাল আছি।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারি বিনিয়োগ যেভাবে হচ্ছে, বেসরকারি বিনিয়োগ কিন্তু সেভাবে বাড়ছে না। প্রবৃদ্ধিকে আরো গতিশীল করতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো ও শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) ভাইস-চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নিয়ে এডিবির প্রক্ষেপনের সঙ্গে একমত পোষন করে বলেন, এবছর দেশে বন্যা বা তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেনি, ফলে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি বেশ ভাল হবে। পাশাপাশি রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা রয়েছে। সেবাখাতে বরাবর ভাল প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সুতরাং উৎপাদনখাতে যদি ভাল করতে পারি, তাহলে চলতি অর্থবছরে সরকারের জিডিপির যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, সেটা অর্জন করা সম্ভব হবে।

তবে তিনিও মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি কত হল-এটা নিয়ে না ভেবে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখাটাই মুখ্য বিষয়। আমরা সেখানে ভাল করছি।’

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি খাতের বিনিয়োগ চোখে পড়ার মত। এখন দেখার বিষয় কত দ্রুত এই বিনিয়োগের সুফল আমরা পাচ্ছি। যত দ্রুত এই সুফল পাবো, অর্থনীতির গতিধারা তত বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।