অবিলম্বে প্রবীর সিকদারের মুক্তির দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে বিক্ষুদ্ধ সাংবাদিক সমাজ। গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া তার কর্মস্থল থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ায় ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, আজকের মধ্যে প্রবীর সিকদারকে ফিরিয়ে না দেওয় হলে বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাবে তারা।
বেলা সোয়া একটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবীতে সোচ্চার প্রবীর সিকদারকে রাষ্ট্রতো নিরাপত্তা দিতেই পারেনি উল্টো তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এসময় দ্রুত তার মুক্তির দাবী জানান বক্তারা।
সাংবাদিকরা প্রবীর সিকদারকে আটকের জন্য স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দায়ী করে বলেন, তার কিছু হলে সব দায় মন্ত্রীকেই নিতে হবে। খন্দকার মোশারফ হোসেনের বাবা রাজাকার ছিলেন। এখন লুলা রাজাকার (মুসা বিন শমসের) রক্ষায় তিনি কাজ করছে।
এমন কি প্রবীর সিকদারের পক্ষে কেউ যেনো আদালতে আসতে না পারে সে জন্য খন্দকার মোশারফ হোসেনের সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছে। এমনকি কেউ আদালতে এলে তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
সমাবেশের সঞ্চালনাকারী পুলক ঘটক বলেন, ২০০১ সালে মুসা বিন শমসেরের নামে দৈনিক জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ কলামে লেখায়, প্রবীর সিকদারকে একটি পা ও হাত হারাতে হয়েছে। আজ রাষ্ট্র তার অন্য একটি পায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। দেশে যখন স্বাধীনতার পক্ষের সরকার তখন প্রবীর সিকদারের মতো সাংবাদিকদের সাথে এমন আচরন মেনে নেওয়া যায় না।
সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে প্রবীর সিকদার প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন। দেশে এখন যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছে। কারও কারও বিচার শেষও হয়েছে। কিন্তু মুখোশধারী এখনও অনেক রাজাকার দেশে রয়ে গেছে। প্রবীর সিকদার তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি তার দ্রুত মুক্তি দাবি করেন।
এ সময় দৈনিক জনতার রিপোর্টার শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রবীর সিকদারের নিজের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের কাছে গিয়েছিলো। পুলিশ তার জিডি নেয়নি। কিন্তু উল্টো তারা তাকেই গ্রেফতার করেছে। এ সময় প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করা অ্যাডভোকেট স্বপনের বিচার দাবি করেন।
সমাবেশে প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিকা সিকদার ও ছেলে সুপ্রীয় শিকদার উপস্থিত ছিলেন।
অনিকা সিকদার তার বক্তব্যে বলেন, উনি শারীরিক ভাবে এমনিতেই অসুস্থ। একটি পা না থাকায় উনি এমনিতেই দশ মিনেটের বেশি দাঁড়াতে পারেন না। সেখানে ১৮ ঘন্টা আগে তুলে নেওয়া স্বামীর শরীরের ব্যাপারে শংকা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আগে থেকেই তার জীবন নাশের শংকা করছিলেন। এখন আঘাতটা আসলো।
সুপ্রিয় বলেন, বাবার বিরুদ্ধে ফরিদপুর আদালতের একজন আইনজীবী স্বপণ আইসিটি আইনে ৫৭ ধারায় মামলা করেছেন। তাকে ফরিদপুর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু চাপের কারণে কোন আমাদের পক্ষে কোনো উকিলই দাঁড়াচ্ছে না।
সমাবেশের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করতে উপস্থিত ছিলেন গণজাগরন মঞ্চের অন্যতম সংগঠন বাপ্পা দীপ্ত বসু ও মাহমুদুল হক মুন্সী।
তারা বলেন, রাষ্ট্রে আজ মুক্ত বুদ্ধি ও চিন্তার লোকেদের উপর আঘাত করা হচ্ছে। প্রবীর সিকদার এমন একজন মানুষ যিনি প্রথম থেকেই যুদ্ধাপরাধী বিচারের জন্য সোচ্চার ছিলেন। এজন্য তার উপর আঘাত এসেছে। মুক্ত চিন্তার ব্লগারদের আজ হত্যা করা হচ্ছে। রাষ্ট্র তাদের লেখার উপর বিধি নিষেধ আরোপ করছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না।
সমাবেশে বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল পাশা এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, দেশের সংবিধানে ধর্মরিপেক্ষতার কথা বলা আছে। কিন্তু যারাই মুক্ত চিন্তা ও বুদ্ধির চর্চা করছে তাদেরকেই হত্যা করা হচ্ছে। এটাই যদি চলতে থাকে তাহলে সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা শব্দটি তুলে নিন।
এই দেশের স্বাধীনতায় সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন তিনি। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা।