চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

প্রবল তাপদাহ: প্রকৃতির প্রতিশোধ

বহুকাল আগে থেকেই বাংলাদেশকে ষড়ঋতুর দেশ বলা হলেও এখন বাস্তবে সেই ঋতুগুলোকে অার আলাদা করে উপলব্ধি করা যায় না। এক সময় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ঋতুর আবির্ভাব ঘটতো। কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি অার জলবায়ুর পরিবর্তনে নিশ্চিত করেই বলা যায়, এদেশের ঋতু বৈচিত্র্য পাল্টে গেছে।

পাল্টে গেছে বলেই গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীতের বাইরে এখন অন্য কোনো ঋতুকে আলাদা করে চেনা যায় না বললেই চলে। দেশের জলবায়ুতে এমন বড় পরিবর্তনের সর্বশেষ উদাহরণ বর্ষাকাল (আষাঢ়-শ্রাবণ)। এবছর বর্ষারও দেখা নেই। হাওর অঞ্চলে যা-ও বা কয়েকদিনের জন্য বর্ষা এসেছিল; কিন্তু সারাদেশে তার কোনো প্রভাব ছিল না। এই ঋতুর বড় বৈশিষ্ট্য হলো বৃষ্টিপাত। কিন্তু এই আষাঢ়-শ্রাবণে ঋতুর চরিত্র অনুযায়ী বৃষ্টিপাত ছিল না।

সেই বৃষ্টির জন্য হাহাকারের মধ্যেই শুরু হয়েছে ভাদ্র মাস বা শরৎকালের। ভাদ্র তার চিরায়ত রূপ নিয়েই হাজির হয়েছে। ভাদ্র মানেই ‘তাল পাকা গরম’। তাই তীব্র গরমে নাস্তানাবুদ সারাদেশের মানুষ। ঘেমে-নেয়ে একাকার। সূর্য রশ্মি যেন শরীরের চামড়া ভেদ করে ঢুকে পড়ছে। তাই এই শরতেও বৃষ্টির প্রার্থনা তাদের।

এই তীব্র তাপদাহ থেকে কবে মুক্তি মিলবে তা বলতে পারছে না কেউই। এমনকি আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিনই বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়ে গেলেও দিনশেষে সেই বৃষ্টি অধরাই থাকছে। তাদের কথা ঠিকঠাক মিলছে না। বিশেষ করে রাজধানীতে আজকের ছিটেফোঁটা বৃষ্টির কথা বাদ দিলে বেশ কিছুদিন ধরেই বৃষ্টি নেই। এ জন্যই গরমের তীব্রতা আরো বেশি।

রোববারও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বহু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় মাঝারী ধরনের বৃষ্টির পাশাপাশি ভারী বর্ষণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার কতটা দেখা মিলবে; তা কেউ বলতে পারছে না।

ফিরে আসি সেই শ্রাবণের কথায়। বৃষ্টিপাতের মাস বলে সুপরিচিত এই মাসকে নিয়ে বহু কবিতা, গান ও সমৃদ্ধ সাহিত্য রচনা হয়েছে। নাটক অার চলচ্চিত্রের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু সেই শ্রাবণের আচরণ এখন পাল্টে গেছে। বদলছে এই মাসের চরিত্র ও ধরণ।

আবহাওয়াবিদরাও বলছেন, গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমের কারণ মূলত বর্ষা ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়া। আর বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম বেশি অনুভব হচ্ছে। যে কারণেই হোক না কেন, প্রকৃতির এ বৈরি আচরণের বড় শিকার হচ্ছে মানুষ। যদিও এর পেছনে সবচেয়ে বড় দায়ও এই মানুষেরই। কেননা বছরের পর বছর আর যুগের পর যুগ ধরে মানুষ এই প্রকৃতিকে ধ্বংসের খেলায় মেতেছে। যার ফল বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া।

আমরা মনেকরি, প্রকৃতির এই বৈরিতার অবসানে মানুষকেই উদ্যোগী হতে হবে। প্রকৃতিকে তার নিজের মতো করেই বাঁচতে দিতে হবে। না হলে, এই বৈরিতার সবচেয়ে শিকার হতে হবে মানুষকেই। যার আলামত এরই মধ্যে অামরা দেখছি।