দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় মন্ত্রী, এমপিসহ ভিআইপিদের উল্টোপথে চলাচল প্রায়ই শিরোনাম হয়। ভিআইপিরা উল্টোপথে চলাচল করায় যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও একাধিকবার স্বীকার করেছেন। এরপরও যখন উল্টোপথে চলাচল বলতে গেলে কমছে না, তখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শোনালেন দায়িত্বশীলতা ও আশার কথা।
তিনি বলেছেন: ‘আমি কখনোই রাস্তায় উল্টো পথে গাড়ি নিয়ে আসি না।’ প্রধান বিচারপতির এই অবস্থানকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ঢাকার অন্যতম প্রধান ভোগান্তির নাম যানজট। এর ফলে রাস্তায় কোটি কোটি কর্মঘণ্টার অপচয় হয়। সোমবার এমনই এক পরিস্থিতির অবতারণা হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
সোমবার সকাল ৯ টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে দিনের নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু একের পর এক কয়েকজন আইনজীবীর পক্ষ থেকে কার্যতালিকাভুক্ত মামলা শুনানির জন্য সময় (শর্ট পাসওভার) চাওয়া হয়। আর এই শর্ট পাসওভার চাওয়ার জন্য কারণ হিসেবে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাফিক জ্যামের কথা উল্লেখ করা হয়।
একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন তার মামলা মুভ করার জন্য আপিল বেঞ্চের ডায়াসে আসেন। এসময় এ এম আমিন উদ্দিন প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বলেন: ‘সরি মাই লর্ড। একটু দেরি হয়ে গেল, আজ রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল।’
এসময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন: ‘আমরা তো ঠিক সময়েই কোর্টে আসি।’
জবাবে অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন: ‘মাই লর্ড, আপনারা তো উল্টো পথেও আসতে পারেন। তখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন: ‘না, না, না। আমি কখনোই রাস্তায় গাড়ি নিয়ে উল্টোপথে আসি না।’
দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে বিশেষ করে রাজধানীতে উল্টোপথে চলার তালিকায় ইতোমধ্যে সিনিয়র সচিব, পুলিশের ডিআইজি, সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীসহ প্রায় সব খাতের ভিআইপিদের গাড়ি দেখা গেছে। নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতার এই সময়ে দায়িত্বশীলরা প্রধান বিচারপতির এই অবস্থান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন বলেই আমরা আশা করি।
একইসঙ্গে যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।