চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রধান বিচারপতির কাছে খালেদার আইনজীবীরা

পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নতুন এজলাসে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচার এবং তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করতে গেছেন খালেদার আইনজীবীরা।

রোববার ১ টা ২০ মিনিটে প্রধান বিচারপতির সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের চেম্বারে তার সাথে আলোচনার জন্য যান খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব, এ জে মোহাম্মদ আলী, মির নাসির, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন।

এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সাথে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন খালেদার আইনজীবীরা। এসমত তারা‘বিচারিক সীমা লঙ্ঘনকারীদের’ বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে একটি লিখিত আবেদনও করেছেন। যেখানে মূলত পাঁচটি যুক্তি তারা তুলে ধরেছেন। যেখানে বলা হয়েছে-

১)  মাসদার হোসেন মামলার যুগান্তকারী রায়িএবং সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচার বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তি এবং বিচারকরা বিচারকাজ পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা, নিয়ন্ত্রণর বিষয়ে অবশ্যই আগে সুপ্রিম কোর্টের মতামত ও পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু ঢাকার বিশেষ আদালত-৫ স্থান্তরের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের কোনো পরামর্শ তো করা হয়নি, অনুমোদনও নেওয়া গয়নি। এতে মাসদার হোসেন মামলার রায়ে এবং সংবিধানে স্বীকৃত সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বকে পুরুপুরি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

২) সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন সকল আদালতের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা হাই কোর্ট বিভাগের উপর ন্যাস্ত থাকার পরও উচ্চ আদালতের অনুমোদন ছাড়া আদালত স্থানান্তর বেআইনি এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত। এটি করে উচ্চ আদালতের মর‌্যাদাকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে।

৩) সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন ছাড়া আদালত স্থানান্তর সংক্রান্ত গেজেট জারি ও তা কার‌্যকরের কোনো সুযোগ নেই। যদি করা হয়, তবে তা হবে সম্পূর্ণ কায়েমী সার্থে।

৪) খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি হাঁটতে পারছেন না। যা সরকারই স্বীকার করেছে। কিন্তু তারপরও সংশ্লিষ্ট আদালত তার পছন্দমত চিকিৎসক দিয়ে তার সুচিকিৎসার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

৫) দেশের কারাগারের তালিকা থেকে পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি এখনও বাদ দেওয়া হয়ননি। কিন্তু সুপ্রিম কার্টের অনুমতি ছাড়াই এই কারাগারটিতে আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে। এটি বেআইনি এবং এটি করতে যে গেজেট জারি করা হয়েছে সেটি আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত।

লিখিত আবেদনে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বলা হয়েছে, “আমরা আপনার কাছে অনুরোধ করছি, যারা বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং এই বিচারিক ক্ষমতা অপব্যবহারে যে বিচারিক কর্মকর্তা তার বিচাররিক সীমা লঙ্ঘন করেছেন- তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট বাংলদেশ (হাইকোর্ট বিভাগ) ১৯৭৩ বিধি অনুযায়ী তদন্ত করে বিচার বিভাগকে রক্ষার সার্থে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হঠাৎ করে রাতের বেলা নিয়ম বহির্ভুতভাবে, আইন বহির্ভুতভাবে জেলখানার একটি কক্ষকে কারাগার হিসেবে পরিগণিত করে একটি অস্থায়ী আদালত স্থাপন করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, গত তারিখে অসুস্থ অবস্থায় বলতে গেলে জোর করে তাকে সেই আদালতে হাজির করা হয়েছে।

আইনজীবীদের কোনো জুডিশিয়াল নোটিস পর‌্যন্ত করা হয়নি। কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে একটা জুডিশিয়াল আদেশ দিয়ে আইনজীবীদের একটা নোটিস করতে হয়। সেই নোটিশ পর‌্যন্ত করেনি। যেহেতু এটা (জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট) ওপেন ট্রায়াল না, সে কারনে আমরা সেখানে (স্থানান্তরিত আদালতে) উপস্থিত হতে পারি নাই। সে কারনে ওই আদালত আবার ১২ সেপ্টেম্বর তারিখ দিয়েছেন।’

সাক্ষাতে প্রধান বিচারপতিকে কী বলা হয়েছে বা তিনি কী বলেছেন, জানতে চাইলে জয়নুল বলেন, ‘আমরা মনে করেছি, সংবিধানের অভিভাবক হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। আর সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। সুতরাং এই ধরনের গেজেট নোটিফিকেশন সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ (হাই কোর্ট) রুলস ১৯৭৩ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের পাওয়ার। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা না করে এই ধরনের কোর্ট স্থাপন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে না। এই কথাগুলো আমরা বলেছি।

আমরা এও বলেছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতি আপনি এই জুডিশিয়ারীর অভিভাবক। আমরা মনে করি আপনার সুপ্রিমিসি এবং মাসদার হোসেন মামলার পরে সুপ্রিম কোর্টে সুপ্রিমিসি অবশ্যই থাকতে হবে।

মাননীয় প্রধান বিচারপতি আপনার সঙ্গে আলোচনা না করে রাতের অন্ধকারে এই ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি বিচার বিভাগের জন্য খুবই দুঃখজনক। কোন বিচারালয় এইভাবে স্থানান্ত করতে পারে না।

আমরা বিশ্বাস করি রাতের অন্ধকারে এই রকম একটি আদালত স্থানান্তরের জন্য গেজেট করতে আপনি অনুমতি দেন নাই। প্রত্যেকটি পয়েন্টে অনুযায়ী আমারা প্রধান বিচারপতির কাছে বলতে সক্ষম হয়েছি। প্রধান বিচারপতি ধৈর‌্যর সঙ্গে কথা শুনেছেন এবং আমাদের আবেদন গ্রহণ করেছেন। আমরা আশাবাদী। তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

প্রধান বিচারপতি বলেছেন আমি এটা দেখব। বলেছেন, আমার ক্ষমতাবলে, মাসদার হোসেন মামলার আলোকে এবং ১৯ বি অনুযায়ী আমার যেটুকু ক্ষমতা আছে সে অনুযায়ী আমি বিষয়টি বিবেচনা করব।’ এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সাক্ষাতের পরপরই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাতের পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ঈদের পর সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলাম। পারিবারিক কারণে এতদিন দেখা করতে পারিনি। আজকে মনে করলাম যে, ঈদের সাক্ষাত করা দরকার।’

এসময় আদালত স্থানান্তরের ষিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আনিসুল হক বলেন, ‘আমি মনে করি যে, উনারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) যদি এরকম কথা বলে থাকেন তাহলে আমি বলবো, উনারা আইন জানেন না।