চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনাকে অভিবাদন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেন দেশের চারবারের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের প্রথম সন্তান তিনি। ১৯৮১ সাল থেকে দেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন। সফল রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে বাংলাদেশের নতুন অবয়ব সৃষ্টির সফল কারিগর জননেত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম আসতেই চলে আসে বাংলাদেশের নাম। শেখ হাসিনার নাম সামনে আসতেই চলে আসে একটি রাষ্ট্রের, একটি জনপদের মাথা তুলে দাঁড়াবার গল্প। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সারা বিশ্বে বিষ্ময় হয়ে ওঠার গল্প। একটি জাতির পুর্ণজাগরণের গল্প। ১৬ কোটির মানুষের চোখে নতুন স্বপ্ন ছড়িয়ে দেবার মানুষটির গল্প। দেশের অপামর মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জননেত্রী হয়ে ওঠার গল্প।

জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রথম সন্তান, শেখ হাসিনার রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশের গল্পটা সহজ ছিলোনা। ঘাতকের নির্মম আঘাতে নিহত হওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অস্পুর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই তাঁর এই সংগ্রামী পথ চলা। দেশকে স্বনির্ভর করতে, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে উন্নত রাষ্ট্র এবং সৃষ্টিশীল জাতির সারিতে নিয়ে যেতে তাঁর এই লড়াই।

এ লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতেই রাজনীতির দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পথে অসংখ্য বাঁধা পেরিয়ে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে দ্বিতীয়বার এবং ২০১৪-২০১৮ মেয়াদে তৃতীয়বার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শেখ হাসিনা চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ায়। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে ঢাকার বকশীবাজারের প্রাক্তন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ ও বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবী এবং ছাত্র আন্দোলনে তিনি ছিলেন সরব, উচ্চকিত এবং অগ্রপথিক।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাত্র ৪ বছর ৪ মাস পর ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট সংঘটিত হয় দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর, পৈশাচিক রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। শেখ মুজিবর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতা বিরোধী কুচক্রী মহল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও ঘাতকের বুলেটে নিহত হন তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুননেসা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি সহ মোট ২৬ জন।

বিশ্বের অন্যতম নৃশংসতম এই হত্যাকান্ডের মুহুর্তে দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান পরিবারের দুই সদস্য। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। যাঁর হাত ধরে বেঁচে থাকে বাংলাদেশের স্বপ্ন।

বাঙ্গালী জাতিকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে যিনি পতাকা এনে দিয়েছিলেন, মানচিত্র এনে দিয়েছিলেন, বিশ্বের বুকে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করিয়েছিলেন; বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংসতম হত্যাকান্ডর পর ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে শেখ হাসিনা ১৯৮১ এর ১৭ মে আওয়ামী লীগের নতুন নির্বাচিত সভাপতি হিসাবে দেশে ফেরেন নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির পথিকৃত, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার অগ্রনায়ক, স্বপ্ন দেখা, স্বপ্ন দেখানোর স্বপ্ন সারথী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে গণতন্ত্র প্রত্যাবাসনে আন্দোলনে পথে নামেন তিনি। এ সময় মাটি ও মানুষের টানে, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দেশ গঠনের প্রতিজ্ঞা নিয়ে দেশের প্রতিটি অঞ্চল চষে সাংগঠনিক ভাবে পূনর্জাগরণ ঘটিয়েছেন দেশের প্রাচীণতম এবং সফলতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের। একই দাওয়ায় বসে, এই নৌকার গলুইয়ে শুনেছেন সাধারণ মানুষের কথা, প্রান্তিক মানুষের কষ্টের কথা।
উত্তাল রাজপথের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম শেষে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে দীর্ঘকাল জমে থাকা ধুলো ঝেড়ে দেশকে নতুনভাবে গঠনের প্রতিজ্ঞায় এগিয়ে যান শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বে থাকা দেশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।

ক্ষমতার পালাবদলে আবারও রাজপথে আসেন তিনি। মাটি ও মানুষের কথা বলতে, দেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে কন্ঠ তোলার অপরাধে দেশের মৌলবাদী অপশক্তি ২১শে আগস্ট তাঁর ওপর চালায় আরেক বর্বর আক্রমণ। বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁকেও হত্যা করতে চায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী এবং পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি। আবারও মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন তিনি। বাংলাদেশ এবং আওয়ামীলীগ অন্তপ্রাণ নেতারা সেদিন নিজের বুক পেতে, নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়েছিলেন দেশরতœ শেখ হাসিনাকে।

দেশকে বারবার পিছিয়ে দিতে একে একে ক্ষমতায় এসেছে সামরীক জান্তা, স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কারাবরণ করেন, বারবার গ্রেনেড, বোমার হাত থেকে ফিরে আসেন, দেশকে সত্যিকার অর্থে এগিয়ে নেবার সাহস বুকে রেখে। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাবার লক্ষে।

বাংলাদেশের বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়াবার অন্যতম নিয়ামক ছিলো ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচন। এই মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে দেশকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। সমগ্র বাংলাদেশে বিদ্যুতায়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, টেকসই অর্থনীতির পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, দীর্ঘমেয়াদী বনিজ্যিক পরিকল্পনা, সুশাসন, আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক, দেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং এবং সময়োপযোগী পরিকল্পিত উন্নয়ণে স্বল্প সময়ে বদলে যেতে থাকে বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থান। দেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৮২৪ ডলার, জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রথমবারের মতো ৮ এর ঘরে পৌঁছায়। কেবলমাত্র গত ১৩ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৬ শতাংশ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। কোভিডকালীন সময়েও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় ৬.৯৪ শতাংশ ছিল। এমনকি পাশ্ববর্তীদেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিকে বাংলাদেশের উত্থাণকে অভুতপূর্ব বলে অবিহিত করেন বিশ্ব অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিনত হবে। যার পেছনে প্রধান অবদান বাংলাদেশের সফলতম প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রনায়ক, দেশরত্ন শেখ হাসিনার।

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই একটি কথা প্রায়ই শোনা যেতো বাংলাদেশ তলা বিহীন ঝুড়ি। সেই তলা বিহীন ঝুড়িকে বিশ্বের অর্থনৈতিক রোল মডেলে পরিনত করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

মৃত্যুকে জয় করে যিনি এগিয়ে যান তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। একটি রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিয়ে যিনি সর্বোচ্চ সফলতার পথে নিয়ে যান, তিনি সফল রাষ্ট্র নায়ক। যার কথায় আস্থা রেখে দেশের সবশ্রেনী পেশার মানুষ একসাথে, একলক্ষ্যে এগিয়ে যান তিনি, জননেত্রী।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত এই পতাকা সফল মৃত্যুঞ্জয়ী রাষ্ট্রনায়ক, মাটি ও মানুষের নেত্রী, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আরো সমুন্নত হবে, বিশ্বাসটি এ দেশের অপামর মানুষের।

সেই সাহসী পথচলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে শুভেচ্ছা, আপনাকে অভিবাদন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)