চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রধানমন্ত্রী, প্লিজ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমাবেন না!

সঞ্চয়পত্র হচ্ছে নিরাপদ বিনিয়োগ। যাদের অল্প কিছু টাকা আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করার মত সামর্থ্য নাই। আবার সামর্থ্য থাকলেও ঝুঁকি সামাল দেওয়ার মত সাহস নাই। বয়স হয়ে গেছে। বিধবা বা স্বামী অসুস্থ্য। সংসারে কর্মক্ষম কোনো ব্যক্তি নাই। তাদের জন্য একমাত্র ভরসা হচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর এই স্কিম।

এবার বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দু’একমাসের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার পুনঃনির্ধারণ করা হবে। অবশ্য বাজেটের বহু আগে থেকেই শোনা যাচ্ছে সঞ্চয়পত্র নিয়ে খুব পেরেশানিতে আছেন অর্থমন্ত্রী। কারণ ব্যাংকগুলো তাদের সুদের হার কমিয়ে ৫ বা ৭ এনে ঠেকিয়েছে, পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ শতাংশের ওপরে।
কিন্তু কথা হচ্ছে তা হলে সাধারণ মানুষ যাবে কই? কোথায় সেই ভরসা স্থল। যেখানে তার জীবনের একমাত্র সম্বল ওই পুঁজিটুকু খাটালে লোকসান হবে না, সামান্য লাভ পাওয়া যাবে, যা তার সংসারের নিত্যদিনের খরচে খানিকটা সহায়তা দেবে। শেয়ারবাজারে যাবে? সেটাও শেষ। বহু চেষ্টা করেছে সরকার। অনেক ওষুধ-পথ্য খাইয়ে সুস্থ্য করার চেষ্টা করেছেন শেয়ারবাজার নামের হাতিটাকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মাঝখান থেকে প্রণোদনার নামে অনেক অর্থ এদিক সেদিক হয়ে গেছে। অনেকে আজ পুঁজি হারিয়ে পথে বসে আছেন। নতুন করে বাজারে নামবে সেই টাকাও নেই। শেয়ারবাজার এর নাম নেয়ারবাজার হয়ে গেছে, কেউ কেউ রসিকতা করেই কথাটা বলেন।

এখন অসহায় মানুষের একমাত্র ভরসা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। যদি সেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয় আর তখন এক লাখে সাত’শ টাকা পাওয়া যায়। তখন কি হবে সেই বিধবা নারীর? যার স্বামী মারা যাবার পর স্বামীর কর্মস্থল থেকে পনের লাখ টাকা পেয়েছিলেন। আর সেই টাকা দিয়ে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনে মাসান্তে প্রথমে ১৬০৫০ টাকা পেতেন। এক মেয়ে নিয়ে কোনো মতে দিন চলে যেত। কষ্ট করে মেয়েটার পড়ালেখা খরচ চালাতে হত।

কিন্তু ২০১৫ সালের মে মাসে সরকার সেই হার কমিয়ে আনায় পরবর্তীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পর দ্বিতীয় মেয়াদে কেনার পর পেতে থাকে মাসান্তে ১৩৬৮০ টাকা। দিনে দিনে তার খরচ বেড়েছে। মেয়ে বছর শেষে বড় ক্লাসে ভর্তি হয়েছে। বেড়েছে পড়াশোনার খরচ। এক মেয়ে নিয়ে ১৩৬৮০ টাকা দিয়ে সংসার চালাতে যার হিমশিম খেতে হয়, তার জন্য অর্থমন্ত্রীর ওই কথা কতটা হুমকিস্বরূপ, ভাবা যায়?

এখন যদি সত্যি সত্যি পরিবার সঞ্চয়পত্রের এক লাখ টাকায় মুনাফা মাসে ৭০০ টাকা করা হয়, তা হলে ওই নারীর মাসান্তে মুনাফা হবে ১০৫০০ টাকা। তখন তার মাথায় হাত দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না। যেহেতু দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি, গৃহবধূ ও স্বল্প আয়ের মানুষের কথা ভেবে সঞ্চয়পত্রের স্কিমগুলো চালু করা হয়েছিল। তাই ওই দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কথা মনে রেখেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমানোর জোর দাবি সরকারের কাছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবি, আপনি ওই বিধবা নারীর কথা মনে করে দেখুন কি দুর্বিষহ কষ্ট নেমে আসবে তার, যদি আরেক দফা সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানো হয়। জিনিসপত্রের যে দাম মেয়ের পড়াশোনার খরচ, ঘর ভাড়াসহ তার এমনিতেই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এ রকম হাজারো গৃহবধূ আর বয়স্ক মানুষের কথা ভেবে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো বিষয়টি বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)