মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপুর্ণ। জাতিসংঘের একটি সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’-এ ভূষিত করেছে। বিষয়টি আনন্দদায়ক। একই সাথে গৌরবের।
অবশ্য আমার কাছে এরচে’ বেশি গুরুত্বপুর্ণ ঠেকেছে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সাক্ষাতকারটি। তিনি সাক্ষাতকারে জিএসপি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ‘ক্লিয়ার-কাট’ বলেছেন, “জিএসপি দিলে দাও না দিলে না দাও।” ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যটি অত্যন্ত সঠিক ও যুৎসই মনে হয়েছে। একজন সত্যিকার রাষ্ট্রনায়োকচিত এই অবস্থানের জন্য আমি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই ।
কিন্তু সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির রাজনীতিতে আমাদের ইতিহাস মোটেই সুখকর নয়। বরং প্রতিহিংসা ও জেদাজেদির রাজনীতিতে আমাদের রাজনীতিবিদরা বিশ্বসেরা হতে পারেন। নিজের নাক ভঙ্গ করে হলেও পরের যাত্রা ব্যাহত করতে আমাদের রাজনীতিবিদদের জুড়ি নেই। সাম্প্রতিককালে এর মাত্রা চরম পর্যায়ে রয়েছে। এমন একটি দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে দারুণ একটি সুসংবাদ দেখলাম কোনো এক সংবাদপত্রের পাতায়। আর তা হলো, প্রধানমন্ত্রীর ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার পাওয়ায় দেশের দ্বিতীয় প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আনন্দ প্রকাশ করেছে। দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছে।
এর আগে ঢাকার অভিজাত এলাকায় একজন ইতালিয়ান নাগরিক খুন হওয়ার পর যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ উঠে, বিএনপি তাতেও সরকারের সাথে গলা মিলিয়ে এর প্রতিবাদ করেছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের দুঃখজনক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গেছে। মনে আছে, বিগত সংসদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন অমীমাসিংত সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর ।
অপরদিকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চলমান বিষাক্ত রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যেও কিছু ইতিবাচক নজির স্থাপন করেছেন। সর্বশেষ বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র কোকোর মৃত্যুর পর সমবেদনা জানানোর জন্য তিনি বেগম জিয়ার কাছে ছুটে এসেছিলেন। আমি এর সবকিছুই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে চাই। বিশ্বাস করতে চাই, উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনাই আন্তরিকপূর্ণ ছিলো। যদিও প্রতিহিংসা নির্ভর রাজনীতি এর কোনটারই সুন্দর পরিণতি আনতে পারেনি!
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের দুই প্রধান দল– আওয়ামীলীগ ও বিএনপি যদি জাতীয় স্বার্থে ন্যূনতম ঐকমত্য পোষন করে– বাংলাদেশ খুব স্বল্প সময়েই বহুদূর এগিয়ে যাবে। এই মুহূর্তে জাতির সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা এটাই। এই প্রত্যাশার বাতিতে আশার আলো জ্বালাতে পারে আওয়ামীলীগ-বিএনপি। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রসর ভূমিকা পালন করতে পারেন। পারস্পরিক সন্দেহ আর অবিশ্বাসের যে দেয়াল বিশাল আকার ধারণ করেছে, তাতে রাজনীতির কোনো পক্ষই উপকৃত হয়নি। পক্ষান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের রাজনীতি, দেশের সংহতি ও উন্নয়ন। এখন সময় এসেছে ইতিবাচক রাজনীতি চর্চার। পারস্পরিক আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো পদক্ষেপ কিংবা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত উভয় দলের। খুবই ক্ষুদ্র আকারে হলেও তার শুরুটা কিন্তু ঠিকই হয়েছে। এখন প্রয়োজন তার অব্যাহত চর্চা, পরিচর্যা।
বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। নিজেদের মধ্যে দোষারোপের কারণেই ধুরন্ধর শত্রুপক্ষ নিয়মিত বিরতিতে আমাদের রাষ্ট্রবিরোধী অপঘাত সৃষ্টির পায়তারা করে যাচ্ছে। তাদের মিশনে প্রায়ই শত্রুপক্ষ সফল হচ্ছে। গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক হত্যার এক সপ্তাহ পার হতে না হতেই উত্তরবঙ্গে একজন জাপানী নাগরিককে হত্যার মাধ্যমে বোঝা যায়, বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের জাল কতো ব্যাপক!। শত্রুপক্ষের মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এমনিতেই আমাদের অনেক সময় চলে গেছে। স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পরও অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর নিরক্ষরতার পাশাপাশি দারিদ্রতা আমাদের মেরুদণ্ডকে যথেষ্ট কুঁজো করে রেখেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদিতা, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের সামগ্রিক অগ্রতির পথে বিরাট বাধা। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চা ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ। দু’ প্রধান দলের একটিকে বাদ দিয়ে তা কখনোই সম্ভব নয়। তাই, আওয়ামী লীগ-বিএনপির উচিৎ রেষারেষির রাজনীতি ভুলে গিয়ে দেশের স্বার্থে সুস্থ রাজনীতির পথে এগিয়ে যাওয়া, তাতে সবারই মঙ্গল।
এই মুহূর্তে তাদের কাছে এটাই প্রত্যাশা ।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের
নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে
প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)