ভারতে চারদিনের সফর শেষ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই চারদিনের সফর নিয়ে আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই উঠে এসেছে এই সফরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এবারের সফরে প্রাপ্তির খাতায় যেমন কিছু যোগ হয়েছে, তেমনই কিছু হতাশা যোগ হয়েছে অপ্রাপ্তির খাতাতেও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আশেকা ইরশাদ বলেন, সংখ্যাগত দিক থেকে দেখতে গেলে এবারের ভারত সফরে ২২ টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এটি একটি বড় সাফল্য। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রিসিভ করার বিষয়টি বা তার সঙ্গে এই চারদিন যেখানে আচার আচরণ করা হয়েছে তা খুবই ইতিবাচক। বিভিন্ন কথাবার্তাতেও বোঝা গেছে তারা বাংলাদেশকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তবে নেতিবাচক দিক হচ্ছে তিস্তার ব্যাপারটা। এটা নিয়ে এবার তো কোনো আশার কথা শুনলামই না, সামনেও আর কোনো আশা থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে না।
এই বিষয়ে আশেকা ইরশাদ যোগ করেন, অযথা কিছু বিষয় নিয়ে গুজব তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে। যেমন নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তির ব্যাপারটা। তবে এধরনের আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে একটু আলোচনা করে জনগণকে জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে। যেহেতু এবারের সফরের সময়ে আলোচনায় থাকা নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়টিও খু্বই স্পর্শকাতর বিষয়, সুতরাং সেটা নিয়েও একটু আলোচনা-সমালোচনা করার দরকার ছিলো।
একই কখা বলছিলেন অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, এবারে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তিটা হচ্ছে তিস্তা চুক্তি না করতে পারা। এই পানিবন্টন এখন পুরো দেশের মানুষের চাওয়া। সেই বিয়য়ে মোদিও বার বারই বলছেন হবে, কিন্তু প্রাদেশিক একজন মূখ্যমন্ত্রীর না বলার কারণে সেটা আর হয়ে উঠছে না। সেটা নিশ্চয়ই হওয়ার কথা নয়। তাই সব মিলিয়ে এবারের ভারত সফরে খুব বেশি কিছু পেয়েছি বলে মনে হলো না।
আন্তর্জাতিক নিয়মেই কোনো দেশের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে সেই পানি তারা তুলে নিতে পারবে না। কিন্তু তিস্তার ক্ষেত্রেতো সেই নিয়ম মানা হয়না। তারা বিকল্প চুক্তির কথা বলছেন। তিস্তার সব পানি তুলে নেওয়ার পরে চুক্তি করলে তো আর কোনো লাভ হবে না। আর ভারত আমাদের কাছ থেকে কম সুবিধাতো নিচ্ছে না! ট্রানজিট সুবিধার পুরাটাই তারা বলতে গেলে বিনামূল্যে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের রপ্তানি কতটা বেড়েছে সেটার দিকে তাকালেও বোঝা যায় তারা কতটা সুবিধা নিচ্ছেন। তাহলে আমরা এই সুবিধাটা কেন পাবোনা?
এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এই বিষয়ে বাংলাদেশের আরো বেশি সোচ্চার হওয়ার দরকার ছিলো। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তাদের সঙ্গে থাকতেই পারে কিন্তু নিজেদের প্রয়োজনটা আরো দৃঢ়ভাবে বলার দরকার ছিলো। আমরা তো আর কারো কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি না। চাওয়া-পাওয়ার হিসেবটা নিয়ে ভালোভাবে কথা বলার দরকার ছিলো।
এই ব্যাপারে অন্তত একটি টাইমফ্রেম বেঁধে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন তিনি। তিনি বলেন, কি সুবিধা তাদের আমরা দিচ্ছি আর কতটা আমরা পাচ্ছি সেই দিকে বাংলাদেশের নজর দেওয়া উচিত। কিছু না দিয়েই যদি ওরা সব পেয়ে যায় তাহলে নিশ্চয়ই ওরা আমাদের কিছু দিতে চাইবে না। এর আগে আশা ছিলো। এখনো এই বিষয়ে টাইমফ্রেম বেঁধে দেয়নি তারা। সেটা দিলেও বুঝতাম কতদিন নাগাদ তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আমরা আশাবাদী হবো।