মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে কানাডার শক্ত অবস্থানের পরও দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো’র সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনি, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর মতৈক্য বাংলাদেশ-কানাডা সম্পর্কে নতুন মাইলফলকের ইঙ্গিত দেয়। শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসতে চান জানিয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের এই নতুন মাইলফলককে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ট্রুডো নিজেও।
এ বছরের মে মাসে জি-সেভেন আউট রিচ মিটিংয়ের ছবিতে বিশ্বনেতাদের কাতারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দাঁড়িয়েছিলেন পাশাপাশি। সেই আন্তরিকতা এবার যেনো আরও স্পষ্ট।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কানাডা সফরে দু’দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনাকে সুসম্পর্কের শুভ সূচনাই বলা যায়। জাতির জনকের রাজনৈতিক উত্তরসূরীর সঙ্গে ৭১’এ বাংলাদেশের বন্ধু পিয়েরে ট্রুডো’র উত্তরসূরীর এমন আন্তরিকতায় এবারের সফরটি সাবেক কূটনীতিক ও কূটনীতি বিশ্লেষকদের মতে এই সফর আরও কয়েকটি কারণে আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত দুই দেশের এই নব সেতুবন্ধন গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু ও বুদ্ধিজীবী রাজনীতিক পিয়েরে ট্রুডোর দুই উত্তরসূরীর মাধ্যমে। পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডো সংক্ষেপে পিয়েরে ট্রুডো কানাডার ১৫তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, ‘বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ক্ষমতায় থাকা স্বাধীনচেতা এই রাজনীতিক ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। কানাডা সফরে গিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন এবং বিশেষ অবদান রাখায় কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডোকে মরণোত্তর ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাবার হয়ে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সম্মাননা প্রদানকালে উভয় প্রধানমন্ত্রীর পিতার বন্ধুত্বের সম্পর্ককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।’
বাংলাদেশের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কানাডার নেতা পিয়েরে ট্রুডোর অবদানের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনাকে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘আমরা উভয়েই দ্বিতীয় প্রজন্ম। আপনার পিতা ও আমার পিতা দু’জনেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।’
পিয়েরে ট্রুডোর সন্তান এবং উদারপন্থী কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো’র এই মন্তব্যকেও দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্প্রীতির জন্য বিশেষভাবে দেখা উচিৎ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বাণিজ্য এবং সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ ইস্যুতেও বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক অবস্থানের জানান দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্লেষকদের মতে ‘পশ্চিমা অন্যান্য দেশের মতো শুধু বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে অতি উদ্বেগ না জানিয়ে বরং জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। রানা প্লাজা ধ্বস, গুলশান হামলার পর কানাডার পোশাক বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত নিয়ে শঙ্কার কালো মেঘ দূর হয়েছে এই সফরে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ফিফথ রিপ্লেনিসমেন্ট কনফারেন্স অব দ্য গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ)’-এ যোগদানের পর ৪ দিনের কানাডা সফর শেষে আগামীকাল ১৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে কানাডা সফর করেন।
শেখ হাসিনা ১৮ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর আমেরিকা সফর করবেন। এসময় তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ আলোচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।প্রধানমন্ত্রী ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জেনারেল অ্যাসেম্বেলি হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ আলোচনায় বক্তব্য রাখবেন।