প্রায় দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে দফায় দফায় লকডাউন এবং বিধিনিষেধের মতো অমানবিক অথচ বাস্তব পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে হয়েছে সরকারকে। আর এতে দেশের প্রায় সব শ্রেণিপেশার মানুষ কমবেশি ক্ষতির শিকার হলেও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গরিব বা নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের যন্ত্রণার সামান্য কিছু উদাহরণ আমরা গণমাধ্যমে দেখলেও তার পুরো চিত্রই থেকে গেছে মানুষের চোখের আড়ালে। অনেকে ভাবতেও পারবে না, কতটা নিদারুণ কষ্ট আর যন্ত্রণায় করোনার এই বিভৎস সময় তারা পার করছে।
তাদের সেই কষ্ট আর যন্ত্রণা পুরোটা না হলেও কিছুটা লাঘবের সুযোগ তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি চমৎকার উদ্যোগে। তিনি করোনাকালে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
এরই মধ্যে আমরা জেনেছি, ৫টি নতুন প্যাকেজের ওই প্রণোদনায় যেমন দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নৌ-পরিবহন শ্রমিকদের সরাসরি অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে; তেমনি শহর এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তায় দুই সপ্তাহ ধরে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একইভাবে খাদ্য সহায়তা পেতে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করা সাধারণ মানুষের জন্য সারাদেশের জেলা প্রশাসনের মাধ্যমেও খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, গ্রামে কর্মসৃজনমূলক কার্যক্রমের তৈরিতে কম সুদে ঋণ (৪ শতাংশ সুদে) দিতে নতুন করে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসবের বাইরে কম সুদে ঋণ দিতে পর্যটন খাতের হোটেল, মোটেল, থিমপার্কের জন্য কর্মচারীদের পাশেও দাঁড়িয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু এমন ভালো উদ্যোগও অনেক সময় কিছু ব্যক্তি তাদের স্বার্থ পূরণের সুযোগ হিসেবে নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের আশ্রয় নেন। যেমন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর চমৎকার এক উদ্যোগে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য জমিসহ ঘর উপহার। ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না’- এমন অঙ্গিকারে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২ পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে লক্ষাধিক পরিবারের কাছে তা হস্তান্তরও করা হয়েছে।
কিন্তু সেখানে আমরা কী দেখলাম? বহু জায়গায় ঘর তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন কি ঘর পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই তা ভেঙে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। কারণ সেসব ঘর তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। তবে আশার কথা, এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আমরা মনে করি, এমন সব উদ্যোগে কোনোভাবেই অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিৎ নয়। বিশেষ করে অসহায় গরিব মানুষের জন্য নেওয়া কর্মসূচিগুলো সততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।