ডিজিটাল যুগে মনিটরে সংবাদ হিসেবে যা ভেসে উঠে তার সবই আসলে সংবাদ নয়। এমন কনটেন্টকে সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতার উল্টোপিঠে আসল সংবাদ জানানোই এখনকার সাংবাদিকতার মূল চ্যালেঞ্জ বলে উপমহাদেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা মনে করছেন। প্রথম আলোর সেমিনারে তারা বলেছেন, ‘চাপ’ ঠেকাতে অনুসন্ধানী ও সুসাংবাদিকতার বিকল্প নেই।
দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘সংবাদপত্রের চ্যালেঞ্জ: বর্তমান ও ভবিষ্যত’ বিষয়ে এ সেমিনার। দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতায় চাপ ও ভয়ভীতি থাকবেই। তবে আরো গভীর এবং পরিশীলিত সাংবাদিকতা হতে পারে সেই চাপের মোক্ষম জবাব।
এ প্রসঙ্গে আইপিআই’র চেয়ারম্যান জন ইয়ারউড বলেন: সাংবাদিকতা নিজেদের জন্য নয়, বরং এটা জনগণের জন্যে। সুতরাং তাদের কাছেই যেতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদেরও চাহিদা আছে, সেটাও ভাবতে হবে।
ভারতের দৈনিক দ্য হিন্দুর সম্পাদক মুকুন্দ পদ্মনাভন বলেন, ‘বিশ্বে এখন ভালো, খারাপ দুই ধরনের সাংবাদিকতাই হচ্ছে। ভূঁইফোড় ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমগুলো খারাপ সাংবাদিকতা করে, গণমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এখন সময় এসেছে সু-সাংবাদিকতা করে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা।’
দেশ-বিদেশের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ও সংবাদকর্মীরা মনে করেন, মানুষের মনের ভাষা বুঝে সাংবাদিকতা করতে না পারলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আনকোড়া সংবাদাতাদের চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হবে।
আনন্দবাজার পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক স্বাতী ভট্টাচার্য বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, আমরা পাঠকদের গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি না। তাদের বোঝার চেষ্টা করছি না। এমনকি তাদের চাওয়াকেও পাত্তা দিচ্ছি না। উল্টো আমাদের চিন্তা তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছি। আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরাও প্রচলিত সংবাদমাধ্যমগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। কেননা আমরা তাদের মতো করে গ্রামের কথা তুলে আনছি না।’
রাজনৈতিক সংস্পর্শের উর্ধ্বে থেকে সংবাদ পরিবেশন করাকেও গণমাধ্যমের জন্য চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এখন সরকার এবং বিরোধীদলের কাছে গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সংজ্ঞা আলাদা।
ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক রাজ কমল ঝা বলেন: সততা আমাদের সাংবাদিকতার প্রধান বিষয় হওয়া উচিত। কিছু কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন অনলাইন গণমাধ্যম আমাদের সেই কাজটা কঠিন করে দিচ্ছে।
দৈনিক দ্য শিলং টাইমসের সম্পাদক প্যাট্রিসিয়া মুখিম বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমে আমরা এখন বিনোদন নিয়ে ব্যস্ত। আমরা এখন আর শেখাই না। বিনোদন দেই। শুধু বিনোদন সংবাদ মাধ্যমের কাজ নয়।’
সেমিনারে বিশ্বের সেরা সংবাদ মাধ্যমগুলোর ২০ জন প্রতিনিধি ছাড়াও দেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন।