জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান এখন তার ক্যারিয়ার নিয়ে আগের চেয়ে হিসেবি। একযুগের বেশি সময় ধরে তিনি একাই শাসন করছেন ঢালিউড। অশ্লীলতার ছোবলে চলচ্চিত্র থেকে যখন দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলো, শাকিব খান তখন হাল ধরে একাই টেনে তোলেন জরাজীর্ণ সিনেমা শিল্পকে। কাজ করেছেন ওপার বাংলাতেও। অল্প সময়ে সেখানেও তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। শুধু নায়ক নয়, প্রযোজক হিসেবেও সফল তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই নায়ক। বর্তমানে এই তার প্রযোজিত নতুন ছবি ‘পাসওয়ার্ড’-এর শুটিং করছেন।
সম্প্রতি ঢাকার অদূরে একটি শুটিং বাড়িতে বসে শাকিব খান কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে..
বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ‘ভাইজান’। কেমন কাটল বৈশাখের প্রথম দিন?
তোমাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সেইসঙ্গে আমার দর্শক, ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাই শুভ নববর্ষ। এবারের বৈশাখের প্রথমদিন একেবারেই অন্যরকমভাবে কেটেছে। খুব ভালো লেগেছে। কোনো শুটিং রাখিনি। পুরোপুরিভাবে পরিবারকে সময় দিয়েছি, বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে পান্তা, ইলিশ, কাঁচামরিচ দিয়ে ভাত খেয়েছি। গতবার পহেলা বৈশাখে লন্ডনে ছিলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল, অনেকগুলো বছর পর বৈশাখ পালন করছি।
২০১৪ সালে আপনার প্রযোজিত প্রথম ছবি ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ সুপারহিট হয়েছিল। দ্বিতীয় ছবি ‘পাসওয়ার্ড’ নিয়ে জানতে চাই…
শেষ কয়েক বছরে আমি একটা জিনিস খুব ভালো করে খেয়াল করেছি, মানুষের চোখ এখন অনেক ওয়াইড। আমার কাছে মানুষ এই ওয়াইড ছবিই চায়। পিকচারাইজেশন, ওয়াইড গল্প দেখেই মনে হবে একটা মানসম্মত আধুনিক সিনেমা। আমার অভিনীত কলকাতার ছবিগুলো যখন এদেশে মুক্তি পেয়েছে তখন দর্শকদের মধ্যে যে জাগরণ দেখেছি, সিনেমা হলে মানুষের ঢল নামতে দেখেছি। অনেকদিন ধরে আমি ভাবছিলাম, কলকাতার কাজগুলো মানুষ এতো ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে, ঠিক একইভাবে আমি আমার দেশের ছবিতেও এটা দেখাতে চাই। একটি আধুনিক সিনেমার জন্য কী কী করা দরকার আমি জানি। সেগুলো অ্যাপ্লাই করছি ‘পাসওয়ার্ড’-এ। আমি মনে করি, ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা যাই থাকুক না কেন ভালো কাজের ইচ্ছে থাকলে সেটা করে দেখানো যায়। ‘পাসওয়ার্ড’ দিয়ে সেটা করে দেখাবো। মন থেকে বিশ্বাস রাখছি, আমার দর্শক ‘পাসওয়ার্ড’ দেখে প্রাউড ফিল করবে।
‘পাসওয়ার্ড’-এ ক্যামেরার পেছনে যারা কাজ করছেন, তারা কতটা আধুনিক ও মানসম্মত সিনেমা তৈরিতে সক্ষম?
পরিচালক মালেক আফসারী। আমাদের দেশের ওয়ান অব দ্য গ্রেটেস্ট ডিরেক্টর ইন কর্মাসিয়াল ফিল্ম। ক্যামেরার ফ্রেমিং ধরায় তার জুড়ি নেই। অনেকেই জানে না তিনি একজন ভালো ডিওপি। এ ছবির ডিওপি শাহীন, সে এখনকার সময়ের সেরাদের কাতারে। মোটকথা, আমার এ ছবিতে পুরো টিমটা ভালো। সবচেয়ে সেরাদের নিয়ে আমি কাজ করছি। কিছু ইকুয়েপমেন্ট ও টেকনিশিয়ানের ঘাটতি আছে আমাদের এখানে। সেগুলো ইন্ডিয়া থেকে নিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কাজ যতটুকু হয়েছে মুগ্ধ হচ্ছি। মানুষ ‘পাসওয়ার্ড’ দেখে বলবে, শাকিব খান বাংলাদেশ বসে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সিনেমা করেছে।
‘পাসওয়ার্ড’-এর কাজ শেষ হবে কবে? গানের শুটিংয়ে তুর্কিস্থান যাচ্ছেন?
আর মাত্র একদিন শুটিং করলে অফিসিয়ালি শুটিং শেষ। এরপর হয়তো কিছু প্যাচওয়ার্ক বাকি। এই ফাঁকে ফার্স্টলুক ও পোস্টারের ফটোশুট করবো। তারপর পোস্ট প্রোডাকশনের কাজে দেশের বাইরে যাবে ‘পাসওয়ার্ড’। আর গানের শুটিং-এ তুর্কি যাবো এ মাসের শেষে ২৬-২৭ তারিখের দিকে। দুটো গানের শুটিং হবে সেখানে। একটা কথা কি, ‘পাসওয়ার্ড’ বিভিন্ন দেশে মুক্তির দেয়া জন্য এতো যত্ন করে, এতো টাকা খরচ করে বানাচ্ছি। বিভিন্ন দেশের মাল্টিপ্লেক্সে চালাতে হলে রেটিংয়ে টিকতে হয়। সেজন্য কোয়ালিটি খুব দরকার।
কিন্তু বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ধারার ছবি মাল্টিপ্লেক্সে তেমন চালাতে দেখা যায় না!
কয়েকবছর আগে অনেকেই বলতো, শাকিব খানের ছবি মাল্টিপ্লেক্সে নিতে চায় না। কিন্তু আমার কোয়ালিটি সম্পন্ন ছবিগুলোতে দেখা গেছে মাল্টিপ্লেক্সের সামনের টিকেটের জন্য লম্বা-লাইন, হাউজফুল। মাল্টিপ্লেক্সে যে অন্যধারার ছবি ছাড়া চলে না এটা ভুল ধারণা। সব দর্শকই ভালো গল্প ও প্রেজেন্টেশনের ছবি চায়। দিনশেষে সবাই একটা ভালো কাজ দেখতে চায়।
বছরে ৭-৮টি করে ছবি করতেন। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছেন, কেন?
আগামীতে ছবির সংখ্যা আরও কম হবে। ওই ধরণের ছবি মোটেও করবো না যেখানে শুধু কথার বাঁক থাকে। বড়বড় কথা, এইটা হয়ে যাবে, ওইটা হয়ে যাবে। এসব আর করবোই না। প্রপার ছবির মধ্যে থাকবো। আগামীতে কিছু স্টোরি বেজ (গল্প প্রধান) ছবিতে কাজ করবো। চোখের সামনে অনেকের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে দেখেছি। এমন কয়েকজন নায়ক আছে যাদের ছবি আমি নিজে হলে গিয়ে দেখেছি। তাদের বেখেয়ালের কারণে ক্যারিয়ার ধসে গেছে। আমৃত্যু চলচ্চিত্রের জন্য যা দরকার সবই করব। যেসব পরিচালককে নিয়ে কাজ করা দরকার সবই করবো। প্রত্যেকটা উৎসব ধরে সুন্দর করে নিজেকে উপস্থাপন করবো। আগামী ভালোবাসা দিবসের জন্য অন্যরকম একটা প্রেমের গল্পের ছবি মাথায় নিয়েছি। এসব ছবির জন্য আমি পরিচালক নির্মাণ করবো। আমার প্রডাকশনের বাইরে কাজ হলেও এসকে ফিল্মস কোনো না কোনোভাবে এগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকবে।
‘পাসওয়ার্ড’-এর পর কোন ছবির কাজ শুরু করবেন?
পাসওয়ার্ডের কাজ শেষ হলে একটা বিরতিতে যেতে চাই। দেশের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বলিউড স্টাররাও একেকটা কাজের পর বিরতি নিয়ে নিজেকে ভেঙেচুরে নতুন করে গুছিয়ে আবার হাজির করেন। কাজ যেহেতু কম করবো বলেছি তাই-ই করবো। একেক ছবিতে একেকভাবে হাজির হবো। এজন্য সময়ের প্রয়োজন। প্রতিটি কাজের আগে হাতে সময় রাখবো। নিজেকে ভাঙাগড়া, পূর্বের কাজ নিয়ে মানুষ কীভাবে গ্রহণ করলো এগুলো অবজার্ভ করবো।
রোজার ঈদের ছবি ‘পাসওয়ার্ড’। শোনা যাচ্ছে, শাহেনশাহ, নোলক এই দুটো ছবিও ঈদে আসবে?
ঈদ উৎসবে যেমন উপাদানের ছবি থাকা উচিত তা একমাত্র পাসওয়ার্ডেই আছে। ঈদে শুধু পাসওয়ার্ডই মুক্তি পাবে। শাহেনশান, নোলক এগুলো তো ঈদের ছবি না। ‘নোলক’ বৈশাখের ছবি। সেখানে নবান্ন নিয়ে একটা গানও আছে। আর শাহেনশান’র মুক্তি কতবার পেছালো? আমার দর্শকদের মতো আমি নিজেও এটা নিয়ে বিরক্ত। ভালোবাসা দিবস, ২৬ মার্চ সর্বশেষ পহেলা বৈশাখেও এলো না। আমি নিজেও ভালো করে জানিনা কবে মুক্তি পাবে! হয়তো কোরবানির ঈদেও পেতে পারে.. হা হা হা!
‘বসগিরি ২’ ঈদুল আযহার মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করবেন শুনেছিলাম। ‘প্রিয়তমা’ ছবিটা কী আর হবে না?
ঈদুল আযহায় জন্য হচ্ছে না ‘বসগিরি ২’। ‘প্রিয়তমা’ আমার অনেক পছন্দের একটা গল্পের প্রজেক্ট। এর পরিচালক আমেরিকাতে আছেন। মোটামুটি যোগাযোগ আছে তার সঙ্গে। এই ছবি নিয়ে আমার অন্যরকম প্ল্যানিং আছে। ঈদুল আযহার পরে ‘প্রিয়তমা’ কাজ শুরু করবো।
অমিতাভ রেজার ‘রিক্সা গার্ল’-এ কাজ করছেন এটা নিশ্চিত?
কথা হচ্ছে। এখনও ফাইনাল হয়নি।
আদনান আল রাজিবের নির্মাণে পরপর দুটো বিজ্ঞাপনে কাজ করলেন। আপনার দর্শক তার পরিচালনায় ছবিতে দেখতে চায়।
হাহাহা… আদনান খুব ভালো ছেলে। তার মেকিং সেন্সই আলাদা। তাদের মতো ছেলের হাত ধরেই আগামীতে বাংলা সিনেমা এগিয়ে যাবে। তারা যখন সিনেমা নির্মাণে আসবে তখন সিনেমার মেকিং আরও পাল্টে যাবে। দিন তো শেষ হয়ে যাচ্ছে না। আগামীতে অনেক সময় আছে। হবে হবে সবই হবে।
এফডিসির কোনো আয়োজনে আপনাকে দেখা যায় না কেন? এই অভিযোগ তুলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে নানা সময়ে আপনার সমাচোলনা করেন।
অভিযোগটা কে বা কারা করেছে? নাম জানতে চাই। আমি তো প্রায়ই শুনি, ফিল্মের অনেক সিনিয়ির শিল্পীরাও নাকি এফডিসির সমিতির আয়োজনগুলোতে যান না। শুটিংয়ের ব্যস্ততা না থাকলে আমি চেষ্টা করি যাওয়ার। আমি এও শুনেছি, এফডিসি কর্তৃপক্ষও নাকি দ্বায়সারার জন্য দাওয়াতপত্র পাঠিয়ে তারা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ফোন করে খোঁজখবর নেওয়া, সৌজন্যতাবোধও দেখানোর প্রয়োজন নাকি তারা করে না। সেখানে গেলে বহিরাগত মানুষই বেশি থাকে। সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে।